হল ছাড়ছেন না শিক্ষার্থীরা, জারি আছে প্রতিবাদ কর্মসূচি

সাধারণ শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক হল ছাড়ার নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়কে অবরোধ করা হয়। বুধবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

কোটা সংস্কারের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ বুধবার সকাল থেকে একে একে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হয়। একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের বেঁধে দেওয়া সময়ে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ নির্দেশ পেয়ে শিক্ষার্থীদের একাংশ হল ছাড়লেও আন্দোলনকারীদের অনেকে ক্যাম্পাস না ছাড়ার ঘোষণা দেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অনেক শিক্ষার্থী হল ছেড়ে যাননি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে বুধবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে ছেলেদের হল ছাড়ার কথা ছিল। আর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে মেয়েদের হল ছাড়ার কথা। সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত হল ছাড়েননি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুটি আবাসিক হল রয়েছে। বিকেল পাঁচটার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেদের হলে সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে। হল ছেড়ে বেরিয়ে যাননি অধিকাংশ শিক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগ রাতের আঁধারে হামলা করতে পারে—এমন আতঙ্ক রয়েছে শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

খানজাহান আলী হলের আবাসিক ছাত্র শেখ সাকিল বলেন, চারটার দিকে জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান কর্মসূচি শেষ করেন তাঁরা। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে গায়েবানা জানাজা পড়ানো হয়। তারপর তাঁরা হলে এসেছেন। অন্য শিক্ষার্থীরাও হলেই আছেন। শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাঁরা হল ছাড়বেন না।

আরও পড়ুন

এর আগে বেলা ১১টার দিকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি সিন্ডিকেট সভা বসে। সে সভা থেকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আর শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বন্ধ করে দেওয়া হয় আবাসিক হলগুলো। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তাঁদের নিরাপদ স্থানে থাকার স্বার্থে তাঁরা হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন।

খান বাহাদুর আহসানউল্লাহ হলের প্রাধ্যক্ষ মো. ইকবাল আহমেদ বলেন, এ মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বাইরে থাকতে নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছে। শিক্ষার্থীরা আবেদন করেছে হলে থাকার জন্য। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই আপাতত তাঁদের হলে থাকতে দেওয়া হয়েছে। আগামীকাল সুবিধাজনক সময়ে তাঁরা হল ছেড়ে দেবে।

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) বাধ্যতামূলক হল ত্যাগের নির্দেশনা প্রচারের সঙ্গে সঙ্গে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। ঘোষণার প্রতিবাদে এবং ওই নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবিতে বেলা তিনটা থেকে আন্দোলন করেন পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী। আন্দোলনের অংশ হিসেবে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

একপর্যায়ে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি চলাকালে উপাচার্যকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এর ভিত্তিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসেন উপাচার্য, কর্মকর্তা ও শিক্ষকেরা। আলোচনার সিদ্ধান্ত আসতে বিলম্ব হচ্ছে দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন শিক্ষার্থীরা। দাবি আদায়ে উপাচার্যের বাসভবনে তালা দেন তাঁরা।

পরে রাত সোয়া আটটার দিকে হলে থাকার বিষয়ে আশ্বস্ত করা হলে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের ভবনের তালা খুলে দেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রক্টর মো. আজহারুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

আরও পড়ুন