ছাত্রদলের মিছিলে গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় মামলা, গ্রেপ্তার ৩

নিহত ছাদিকুর রহমান ও আশরাফুল হক
ছবি: সংগৃহীত

নরসিংদীতে ছাত্রদলের পদবঞ্চিত নেতাদের মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় দুর্বৃত্তের ছোড়া গুলিতে দুজন নিহতের ঘটনায় মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে নিহত ছাদিকুরের বড় ভাই আলতাফ হোসেন বাদী হয়ে নরসিংদী মডেল থানায় মামলাটি করেন।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, তাঁর স্ত্রীসহ ৩০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করে ওই মামলা হয়েছে। মামলার পর এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আরও পড়ুন

এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা শহরের জেলখানা মোড়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে ঢোকার পথে দুর্বৃত্তের হামলায় জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমান ও তাঁর কর্মী আশরাফুল হক (২২) গুলিবিদ্ধ হন। রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে ছাদিকুরের মৃত্যু হয় এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় পর দিন শুক্রবার সকালে মারা যান আশরাফুল। ছাদিকুর নরসিংদী সদর উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের বাদুয়ারচর এলাকার এবং আশরাফুল শহরের সাটিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা।

মামলার আসামিদের মধ্যে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন ছাড়াও তাঁর স্ত্রী শিরিন সুলতানা, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান, হাজীপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, নরসিংদী সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইলিয়াস আলী ভূঁইয়া রয়েছেন। আসামিরা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ দলটির সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মী।

আরও পড়ুন

মামলার বিষয়ে জানতে বাদী আলতাফ হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তাঁর নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

নরসিংদী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হারুনুর রশীদ মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, হত্যা মামলার আসামিদের মধ্যে জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মহসিন হোসাইনসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত ও আসামি গ্রেপ্তারের স্বার্থে এখনই আসামিদের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ছাত্রদলের কমিটি বাতিলের দাবিতে চার মাস ধরে আন্দোলন করছিলেন পদবঞ্চিত নেতা–কর্মীরা। গত বৃহস্পতিবার জেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ছাদিকুর রহমানের নেতৃত্বে তাঁরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা বের করেন। এতে অন্তত ৫০টি মোটরসাইকেলে শতাধিক নেতা-কর্মী অংশ নেন। শহরের বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণের পর জেলখানা মোড়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক পার হয়ে বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ের দিকে যাচ্ছিল শোভাযাত্রাটি। এ সময় হঠাৎ গুলি করা হয়। এতে ছাদিকুরের মাথায় ও আশরাফুলের পিঠে গুলি লাগে। তাঁরা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে দুর্বৃত্তরা দুটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে এবং অন্তত পাঁচজনকে পিটিয়ে আহত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয় লোকজন ও শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতা-কর্মীরা গুলিবিদ্ধ দুজনসহ আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট নরসিংদী জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ছাদিকুর ও আশরাফুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।

মামলার এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, কমিটি বাতিলের দাবিতে চার মাস ধরে আন্দোলন করায় পদবঞ্চিত নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে জেলা ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির সদস্যরা মোটরসাইকেল শোভাযাত্রায় গুলি করেন। তাঁদের গুলিতে জেলা বিএনপি কার্যালয় এলাকায় ছাদিকুর রহমান ও আশরাফুল হক গুলিবিদ্ধ হন। এতে সমর্থন দেন খায়রুল কবির খোকন।

এ বিষয়ে জানতে মামলার প্রধান আসামি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবিরের মুঠোফোনে আজ রাতে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।