সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর
ফসলি জমির মাটি কেটে রাস্তা সংস্কার
জমি থেকে মাটি না কাটার বিষয়ে ঠিকাদারকে ডাকযোগে তিনটি নোটিশ দিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী।
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রাস্তা বর্ধিত ও উঁচু করার কাজে ফসলি জমি থেকে গর্ত করে মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পের ঠিকাদারের বিরুদ্ধে জোর করে মাটি কেটে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী কৃষকেরা।
উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের গোপীনাথ গ্রামে রাস্তার দুই পাশের কৃষকদের ফসলি জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে গর্ত করে মাটি কেটে রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। এতে ওই গ্রামের শতাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যদিও এই কাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাটি সরবরাহের কথা বলা হয়েছে।
এ সম্পর্কে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ওশান এন্টারপ্রাইজের মালিক আবুল খায়ের সেলিম বলেন, ওই রাস্তা করতে চুক্তির নিয়ম উপেক্ষা করা হলেও জমি গর্ত করা ছাড়া কোনো সুযোগ ছিল না। তবে জোর করে কারও জমির মাটি কাটা হয়নি।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এলজিইডির ব্যবস্থাপনায় ‘গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’-এর আওতায় শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল হাইস্কুল থেকে গোপীনাথপুর পর্যন্ত ৯৫০ মিটার রাস্তা বর্ধিত ও উঁচু করার কাজে ১ কোটি ৮১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাজের মেয়াদ ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে ২০২৪-এর মার্চ পর্যন্ত। প্রকল্পের কাজ পেয়েছে সিরাজগঞ্জ পৌর শহরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওশান এন্টারপ্রাইজ। ওই প্রকল্পে শুধু মাটি সরবরাহের জন্য ৪৫ লাখ ৭ হাজার টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
ঠিকাদার রাস্তার পাশে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তার কাজ করেছেন। গত মাসে গোপীনাথ গ্রামে ওই রাস্তার পাশ থেকে জোর করে মাটি কাটতে শুরু করেন ঠিকাদার। তখন গ্রামের কৃষকেরা উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন। তখন উপজেলা প্রকৌশলীর দপ্তর থেকে ঠিকাদারকে একাধিকবার নোটিশ পাঠান। তারপরও ফসলি জমি থেকে তিনি মাটি কেটে নেন।
এ সম্পর্কে উপজেলা প্রকৌশলী নূরনবী খান বলেন, জমি থেকে মাটি না কাটার বিষয়ে ওই ঠিকাদারকে ডাকযোগে তিনটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তারপরও ঠিকাদার এমন কাণ্ড করছেন। এখন কাজের বিল বন্ধ করে দিতে হবে।
সম্প্রতি গোপীনাথপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার দুই পাশে এক্সকাভেটর দিয়ে ফসলি জমি গর্ত করে কেটে সেই মাটি রাস্তায় ফেলা হচ্ছে। কথা হয় গ্রামের ভুক্তভোগী কৃষক আনিছুর রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমরা রাস্তা চাই। তাই বলে মানুষের ফসলি জমি বিনষ্ট করতে চাই না। আমার ১০ শতক ফসলি জমির মধ্যে ৪ শতক গর্ত করে রাস্তায় মাটি ফেলেছে।’
আরেক ভুক্তভোগী আবু নাঈম বলেন, ‘এই রাস্তার দুই পাশের ফসলি জমি নষ্ট করে রাস্তার কাজ করছেন ঠিকাদার। এ কাজে বাধা দিতে গেলে ঠিকাদারের লোকজন বলেন, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া যাবে না। বাধা দিলে মামলা হবে। এখন গর্ত ভরাট করতে গেলে আমাদের হাজার হাজার টাকার মাটি কিনতে হবে।’ সিরাজগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থলে গিয়ে ঠিকাদারকে জমি থেকে মাটি কাটতে নিষেধ করেছিলাম। এরপরও যদি ঠিকাদার এমনটি করে থাকেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’