‘হাতের সব রগ কেটে গেছে, ঠিক হবে কি না, জানি না’
কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৯ জুলাই ময়মনসিংহ নগরে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। ওই মিছিলে গিয়ে হামলার শিকার হন শিক্ষার্থী আহাদ আকন্দ (২২)। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর হাতের সব রগ কেটে যায়।
আহাদ আকন্দ (নীরব) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের তৃতীয় তলায় ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগীদের বিশেষ চিকিৎসা ইউনিট চালু করা হয়েছে।
রোববার বেলা সোয়া ১১টার দিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত রোগীদের বিশেষ চিকিৎসা ইউনিটের সামনে গিয়ে দেখা যায়, হাতে ব্যান্ডেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আহাদ আকন্দ। তিনি ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন মাইজবাড়ি বিএম কলেজ থেকে। তাঁর বাড়ি ময়মনসিংহ নগরের আকুয়া চুকাইতলা এলাকায়; বাবার নাম বাবর আলী আকন্দ।
আহাদ আকন্দ বলেন, ‘১৯ জুলাই মিছিল নিয়ে নগরের মিন্টু কলেজ এলাকায় যাই। হঠাৎ করে সেখানে ছাত্রলীগ হামলা করে এবং ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো শুরু করে। আমার বাঁ হাতের সব রগ কেটে গেছে। হাত ঠিক হবে কি না, জানি না। ডাক্তার জানিয়েছেন, ঢাকায় রেফার করবে; জরুরি অস্ত্রোপচার করা দরকার। না হলে আমার হাত হয়তো আর কাজ করবে না।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, এমন ২২৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে ১৮১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।
হাসপাতাল সূত্রে জানায়, রোববার বেলা ১১টা পর্যন্ত ওই ওয়ার্ডে মোট ২৫ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশ ময়মনসিংহ ও গাজীপুরে আন্দোলনে আহত হয়েছেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন, এমন ২২৭ জন হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য এসেছেন। এর মধ্যে ১৮১ জনকে ভর্তি করা হয়েছে। অন্যরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান। ১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত এসব রোগী ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় চারজনের মৃত্যু হয় এবং হাসপাতালে মৃত অবস্থায় আনা হয় আরও চারজনকে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে ময়মনসিংহ সদর উপজেলার ঘাগড়া ইউনিয়নের সুহিলা গ্রামের মো. রাজ (১৭)। সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার হেফজ বিভাগের ছাত্র। তার বাবা নেই; নগরের বাড়েরা গ্রামে নানার বাড়িতে থাকে। রাজ বলে, ‘সেদিন (১৯ জুলাই) আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলাম। মিন্টু কলেজ এলাকায় অন্যদের সঙ্গে আমাকেও কোপানো হয়। হাতে দুটি ও কোমরের দিকে একটি কোপ লাগে। বাঁ হাতের রগ কেটে গেছে।’
হাসপাতালে ভর্তি অনেকে গুলিবিদ্ধ ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছেন। কারও হাত-পায়ে ক্ষত; কারও শরীরে ছররা গুলি লেগেছে। বেলা সোয়া ১১টার দিকে ওয়ার্ডের ভেতরে চিকিৎসকেরা রোগীদের দেখছিলেন। রোগীদের সংক্রমণ প্রতিরোধে সর্বসাধারণের ওয়ার্ডে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ফলে অন্য রোগীদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আক্রান্ত হয়ে যাঁরা ভর্তি হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই গুলিবিদ্ধ। পৃথক ওয়ার্ড চালু করে বিনা মূল্যে তাঁদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীদের ঢাকায় রেফার করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান আরও বলেন, রোগীদের শরীরে ক্ষত আছে। তাঁদের ড্রেসিং চলছে। এমন অবস্থায় রোগীদের সংক্রমণ বাড়তে পারে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিষেধ থাকায় ওয়ার্ডে গণমাধ্যমকর্মী ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। রোগীদের স্বার্থেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।