মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে নারায়ণগঞ্জ বিএনপির সভাপতি গিয়াসউদ্দিনের আবেদন
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা-সিদ্ধিরগঞ্জ) আসনে জেলা বিএনপির সভাপতি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলে মোহাম্মদ কায়সারের নামে মনোনয়নপত্র নেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন গিয়াস উদ্দিন। মনোনয়নপত্রটি বাতিল চেয়ে তিনি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছেন।
আজ সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হকের ই–মেইল ও লোক মারফত আবেদনটি পাঠিয়েছেন বলে জানান বিএনপির এই নেতা।
বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না বলে বিএনপির নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। এই সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে আন্দোলন করে যাচ্ছে দলটি। এর মধ্যে গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে জানা যায়, স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন লড়তে মনোনয়নপত্র নিয়েছেন গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলে কায়সার। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গিয়াস উদ্দিনের আরেক ছেলে কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাদরিলের একান্ত সচিব পরিচয়ে নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে দুটি মনোনয়নপত্র নিয়ে যান।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠানো আবেদনে গিয়াস উদ্দিন জানান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিতে তিনি ও তাঁর ছেলে জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে কোনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। কাউকে মনোনয়নপত্র তুলে নিতে ক্ষমতাপত্রও প্রদান করেননি। যদি কেউ মনোনয়নপত্র তুলে থাকেন তাহলে গ্রহণকারীর ব্যক্তির কাছে অনুমতিপত্র ও ক্ষমতাপত্র আছে কি না, সেটি যাচাই না করায় প্রশ্ন তুলেন বিএনপির এই নেতা।
আবেদনে নিজেকে ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন অধিনায়ক’ দাবি করে গিয়াস উদ্দিন বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য সরকারের পদত্যাগ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা, আইনের শাসন ও জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। এই সংগ্রাম সফল না হওয়া পর্যন্ত তিনি ও তাঁর সন্তান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের পতাকাতলে থেকে আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। কোনো লোভ, লালসা ও প্রলোভন আদর্শচ্যুত করতে পারবে না।
গিয়াস উদ্দিনের পক্ষে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাহমুদুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বাতিল চেয়ে একটি মেইল ও লোক মারফত একটি আবেদেন আমরা পেয়েছি। এটি গিয়াস উদ্দিন নিজে পাঠিয়েছেন কি না, সেটি আমরা জানি না।’
জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘গিয়াস উদ্দিনের ছেলে কাউন্সিলর সাদরিলের একান্ত সচিব পরিচয়ে নাজমুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, ট্রেজারি চালান ও মুঠোফোন নম্বর দিয়ে গিয়াস উদ্দিন ও তাঁর ছেলের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নিয়ে গেছেন। আমাদের কাছে এর ভিডিও ফুটেজও রয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা গেছে, নাজমুল হোসেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাদরিলের একান্ত সচিব। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম। তবে নাজমুলের বক্তব্যের জন্য তাঁর মুঠোফোন নম্বরে কল করা হলে সংযোগ বন্ধ পাওয়া যায়।
সার্বিক বিষয়টিকে গভীর ষড়যন্ত্র হিসেবে উল্লেখ করেছেন গিয়াস উদ্দিন। হোয়াটসঅ্যাপে প্রথম আলোকে বিএনপির এই নেতা বলেন, তাঁর ও তাঁর ছেলের পক্ষে যিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে, তিনি দলের কেউ নন। তাঁকে চেনেন না বলে দাবি করেন গিয়াস উদ্দিন। ছেলে সাদরিলের একান্ত সচিব নাজমুল হোসেন মনোনয়নপত্র নিয়ে গেছেন, জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের এমন তথ্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘এ রকম কারও সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা সরকার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনে আছি। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’