‘পইলা দিন গুলিডা বাইর করলে আমার পুত মরলো না অইলে’

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন মাজেদুল ইসলাম। ১০ আগস্ট তোলা। পরে সন্ধ্যায় তাঁর মৃত্যু হয়।ছবি: সংগৃহীত

‘হাসপাতালে খালি কইছে, ‘ও আম্মা, আমার গুলিডা বাইর কর, আমি বাঁচবাম। ওই ভাইজান, আমারে বাঁচাও; ও আব্বা আমারে বাঁচাও।” পইলা দিন গুলিডা বাইর করলে আমার পুত মরলো না অইলে। ডাক্তরেই আমার ছেড়ারে মারছে।’ এভাবেই আহাজারি করছেন রেজিয়া খাতুন। তিনি ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে নিহত মাদ্রাসাছাত্র মাজেদুল ইসলামের মা।

গত ৫ আগস্ট গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন মাজেদুল ইসলাম (২০)। ১০ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান। তিনি গাজীপুরের মাওনা ওভারব্রিজের কাছে আলহাজ আলাউদ্দিন জামিয়া কোরানিয়া আহাদিয়া মাদ্রাসায় কিতাব বিভাগে পড়তেন। ধোবাউড়ার একটি মাদ্রাসায় হেফজ বিভাগ শেষ করেছিলেন মাজেদুল।

মাজেদুলের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ধোবাউড়া উপজেলার গামারিতলা ইউনিয়নের পূর্ব গামারিতলা দড়িয়াপাড়া গ্রামে। বাবার নাম আবদুল মান্নান। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট ছিলেন মাজেদুল।  

মাজেদুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

নিহত মাজেদুলের মা রেজিয়া খাতুন বলেন, ‘আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম, কিন্তু হুজুররা নিয়ে গেছে। সেদিন (৫ আগস্ট) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ফোন দিয়ে এলাকার আন্দোলন সম্পর্কে জানতে চেয়েছিল মাজেদুল। আমাদের এলাকা শান্ত জানাইছিলাম। তখন বলেছিলাম, বাবা তুমি আন্দোলনে যাইও না, ঘরে থাইকো। হুজুরদের সঙ্গে ঘরে বসে থাকতে বলেছিলাম। বেলা আড়াইটার দিকেও কথা বলেছিলাম। কিন্তু বিকেলে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পাই।’

আরও পড়ুন
আশা ছিল, ছেলে আমার জানাজা পড়বে, কিন্তু ভাগ্যে মিলল না। ছেলের জানাজা আমাকেই পড়তে হলো। আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু লাশ হইয়া ফিরল।
আবদুল মান্নান, নিহত মাজেদুল ইসলামের বাবা

পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে আন্দোলনে যান মাজেদুল। মাওনা এলাকায় নিজের মাদ্রাসার কাছেই সেদিন বিকেল চারটা থেকে পাঁচটার মধ্যে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। নাভির নিচে একটি গুলি ও পায়ে ক্ষত হয়। গুলিবিদ্ধ মাজেদুল ইসলামকে সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মাজেদুলের পায়ের ক্ষতের চিকিৎসা করে পরদিন হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়। কিন্তু তাঁর পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হচ্ছিল। ৭ আগস্ট ময়মনসিংহ শহরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে দেখা যায় মাজেদুলের পেটের ভেতরে গুলি আটকে আছে। ওই দিন আবারও তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১০ আগস্ট বিকেলে অস্ত্রোপচার করে গুলি বের করা হয়। জ্ঞান না ফেরায় তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়েছিল। সন্ধ্যা সাতটার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরও পড়ুন

আবদুল মান্নান বলেন, ‘আশা ছিল, ছেলে আমার জানাজা পড়বে, কিন্তু ভাগ্যে মিলল না। ছেলের জানাজা আমাকেই পড়তে হলো। আন্দোলনে যাইতে নিষেধ করছিলাম। কিন্তু লাশ হইয়া ফিরল। ছেলে যে মারা গেল, বিচার চাই। বিচার চাইলে, কেইস করতে হয়। কিন্তু আমরা গরিব মানুষ, কোনো কেইস করি নাই।’