ভোটের দায়িত্বে নারী আনসার, শিশুসন্তান ঘুমায় বারান্দায়
ভোট চলছে। ভোট দেওয়ার অপেক্ষায় এক দল নারী। তাঁদের শৃঙ্খলায় আনতে পেরেশান দুই আনসার সদস্য। বিদ্যালয়ের বারান্দায় অঘোরে ঘুমিয়ে দুটি শিশু। শিশু দুটি ভোটের দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের সন্তান। তৃতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করছেন ওই নারী আনসার সদস্য। উপজেলার মালগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে আজ দুপুরে এমন চিত্র দেখা গেল।
বাড়িতে দেখভালের কেউ না থাকায় বাধ্য হয়ে ভোটের দায়িত্ব পালনের সময় ছেলে মাহফুজ ইবনে আশরাফুলকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন আনসার সদস্য মৌসুমী আক্তার। ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সময় মাহফুজ এসে মাকে বিরক্ত করতে লাগল। দায়িত্ব ছেড়ে ছেলের পেছনে ছোটার সুযোগ নেই—কথাটি ছেলেকে বোঝাতে পারছিলেন না তিনি। শেষমেশ উপায়ান্তর না দেখে হাতে একটি চকলেট ধরিয়ে দিয়ে ছেলেকে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের জানালার গ্রিলের সামনের বাড়তি অংশে শুইয়ে দিলেন। ছেলে সেখানে ঘুমায় আর মৌসুমী নিজের দায়িত্ব পালন করছেন।
মৌসুমী আক্তার জানালেন, তাঁর স্বামী আশরাফুল ইসলামও আনসার সদস্য। তিনিও আজ ভোটের দায়িত্বে আছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুজনকেই বাড়ি ছেড়ে নিজ নিজ দায়িত্বের জায়গায় চলে আসতে হয়েছে। ছেলেকে কারও কাছে রেখে আসবেন, সেই উপায় নেই। তাই নিজের সঙ্গে নিয়ে এসেছেন। বললেন, ‘কষ্ট হলেও এখানে মা-ছেলে একসঙ্গে আছি। এটাই সান্ত্বনা।’
মাহফুজ যেখানে ঘুমিয়ে ছিল, তার নিচে একটি বেঞ্চ পেতে ঘুমিয়ে ছিল আরেকটি শিশু। শিশুটি ভোটের দায়িত্ব থাকা আরেক আনসার সদস্য হাসিনা বেগমের মেয়ে। তাঁর বাড়ি পীরগঞ্জ উপজেলার বৈচুনা গ্রামে। স্বামী মনজুর রহমান একজন কৃষিজীবী।
হাসিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েকে কার কাছে রেখে আসব, এমন কেউ নেই। তাই ওকে ভোটকেন্দ্রে আনতে হয়েছে। যদিও জানি ভোটকেন্দ্রে অনেক ঝামেলা হয়, কিন্তু কী করব? আমাকে তো আমার দায়িত্ব পালন করতে হবে।’
সংগ্রামী এই মায়েদের বিষয়ে ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আহমেদ হোসেন বলেন, দায়িত্বে থাকা দুজন নারী আনসার সদস্য তাঁদের সঙ্গে দুই শিশুসন্তান নিয়ে এসেছেন। তাঁরা বিষয়টিকে মানবিকভাবে দেখছেন।