নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলমের (৫৮) বাড়ি গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার পূর্ব চন্দিয়া গ্রামে। স্থানীয়ভাবে তিনি ফুয়াদ নামে পরিচিত। তিনি গ্রামে কম আসতেন; সর্বশেষ এসেছিলেন গত জানুয়ারিতে।
পূর্ব চন্দিয়া গ্রামে ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে থাকেন জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই লাভলু মিয়া। তিনি জানান, এলাকার জমিজমা বিক্রি করে জাহাঙ্গীর ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। তবে গ্রামের বাড়ি ছাড়া জেলায় আর কোথাও তাঁর বাড়ি বা জমিজমা আছে কি না, এলাকাবাসী তা জানেন না। তবে তাঁরা শুনেছেন, ঢাকা ও রাজশাহীতে জাহাঙ্গীরের একাধিক ফ্ল্যাট ও অনেক সম্পদ আছে।
রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত পাঁচজনের মধ্যে পিএসসির সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার বিষয়টি পিএসসির নিজস্ব তদন্তে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে ঢাকা থেকে সিলেটে বদলি করা হয়েছিল।
জাহাঙ্গীর ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের পূর্ব চন্দিয়া গ্রামের মরহুম দম্পতি ছবির উদ্দিন মণ্ডল ও ফজিলাতুন নেছার ছেলে। চার ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছোট। বড় ভাই সাইফুল ইসলাম সোনালী বাংকে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি অবসরে, থাকেন গাইবান্ধা জেলা শহরে। তাঁর অন্য দুই ভাই মারা গেছেন।
রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গত সোমবার গ্রেপ্তার হওয়া ১৭ জনের মধ্যে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) কর্মকর্তা-কর্মচারী ছয়জন। তাঁদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত পাঁচজনের মধ্যে পিএসসির সিলেট কার্যালয়ের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম রয়েছেন।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকেন। সেখানে তাঁর নিজের ফ্ল্যাট রয়েছে। তাঁর শ্বশুরবাড়ি রাজশাহী জেলায়। তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে জাহাঙ্গীর স্নাতক পাস করেন। তিনি পিএসসিতে সহকারী কাম টাইপিস্ট পদে চাকরি শুরু করেন। পর্যায়ক্রমে পদোন্নতি পেয়ে উপপরিচালক হয়েছেন।
ফুলছড়ির কঞ্চিপাড়া ইউনিয়নের মদনের পাড়া-কালিরবাজার পাকা সড়ক থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে পূর্ব চন্দিয়া গ্রামে জাহাঙ্গীরের গ্রামের বাড়ি। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ওই বাড়ির সামনে পুকুর। আধাপাকা টিনশেড ঘর। ঘরের পাশের কক্ষে গরুর খামার। পেছনে লিচুর গাছ জাল দিয়ে ঢাকা। বাড়িটি জরাজীর্ণ; টিনে মরিচা ধরেছে।
ওই বাড়িতে দীর্ঘদিন ধরে জাহাঙ্গীরের চাচাতো ভাই লাভলু মিয়া পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। জাহাঙ্গীর বছরে এক–দুবার বাড়িতে আসেন। দু–এক দিন থেকে চলে যান। সর্বশেষ গত জানুয়ারিতে বাড়িতে এসেছিলেন।
লাভলু মিয়া বলেন, ‘পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় জাহাঙ্গীরের নাম থাকার কথা শুনেছি। তবে এ ঘটনার সঙ্গে জাহাঙ্গীর জড়িত নয়।’ তাঁর দাবি, জাহাঙ্গীর আলমের বেশ কিছু জমিজমা ছিল। সেগুলো প্রায় দুই কোটি টাকা বিক্রি করে তিনি ঢাকায় ফ্ল্যাট কিনেছেন। ছয় মাস আগেও তিনি ৫০ লাখ টাকার জমি বিক্রি করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পূর্ব চন্দিয়া গ্রামের এক স্কুলশিক্ষক বলেন, ‘আমাদের এলাকায় আবাদি বা বিলের জমি বর্তমানে প্রতি শতক ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা বেচাকেনা হচ্ছে। এ হিসাবে এক বিঘা জমির দাম হয় ১৩ থেকে ১৫ লাখ টাকা। দুই কোটি টাকার জমি বিক্রি করতে গেলে ১৩ থেকে ১৫ বিঘা জমি দরকার। জাহাঙ্গীর পৈতৃক সূত্রে তিন–চার বিঘার বেশি জমি পাননি।’
স্থানীয় কয়েকজন জানান, জাহাঙ্গীর ঢাকায় বড় চাকরি করতেন বলে তাঁরা জানেন। গ্রামের বাড়িটি ছাড়া জেলার আর কোথাও তাঁর বাড়ি বা জমিজমা আছে কি না, তা তাঁরা জানেন না। তবে ঢাকায় ও রাজশাহীতে তাঁর একাধিক ফ্ল্যাট ও অনেক সম্পদ আছে বলে তাঁরা শুনেছেন।