একুশে পদকপ্রাপ্ত সাধক কবি খোদা বক্স সাঁইকে গানে গানে স্মরণ
একুশে পদকপ্রাপ্ত লালন সাধক কবি খোদা বক্স সাঁইয়ের দুই দিনব্যাপী স্মরণানুষ্ঠান শুরু হয়েছে। আজ সোমবার চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামে কবির আখড়াবাড়িতে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এবার কবির ৩৪তম স্মরণানুষ্ঠান হচ্ছে।
স্মরণানুষ্ঠান উপলক্ষে সারা দেশ থেকে খোদা বক্স সাঁইয়ের ভক্ত ও অনুসারীরা আখড়াবাড়িতে এসেছেন। প্রথম দিনে আজ বিকেলে কবির জীবনী নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এতে অংশ নেন বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধা মামুনুর রশিদ, কণ্ঠশিল্পী সৃজনী তানিয়া, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি চুয়াডাঙ্গা ইউনিটের নির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম।
আলোচনা সভার আগে অতিথিরা কবির পরিবারের সদস্য ও ভক্তদের সঙ্গে নিয়ে কবির সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরপর বাউলশিল্পীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কবি খোদা বক্স সাঁইয়ের লেখা ও সুর করা গান গেয়ে তাঁকে স্মরণ করেন। এ সময় সেখানে লালন শাহর গানও পরিবেশিত হয়। রাতে আছে বাউলগানের আসর।
খোদা বক্স সাঁইয়ের দীর্ঘদিনের সঙ্গী আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছি গ্রামের বাসিন্দা ৯০ বছর বয়সী গঞ্জের আলী শাহ বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে থেকেই খোদা বক্স সাঁইয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব। সে বেঁচে থাকতে যেমন আসতাম, তাঁর ওফাত গ্রহণ করার পরও নিয়মিত এই আখড়াবাড়িতে আসি। বন্ধুকে পাই না কাছে, তবে বন্ধুর লেখা ও সুর করা গান গেয়ে মনে অন্য রকম শান্তি পাই।’
মানিকগঞ্জ থেকে আসা বাউল ও চর্যাপদ শিল্পী অন্তর সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার বছর ধরে স্মরণানুষ্ঠানে আসি। বাউলদের মধ্যে প্রথম একুশে পদকপ্রাপ্ত খোদা বক্স সাঁইয়ের সরাসরি সান্নিধ্যে আসার সুযোগ হয়নি। বাংলা একাডেমির উপপরিচালক সাইমন জাকারিয়া স্যারের কাছ থেকে এই বাউল সাধকের জীবনী ও কর্ম বিষয়ে জেনেছি। জীবনের বাকি সময়টা এই গুণীজনকে স্মরণ করতে চাই।’
রাজশাহীর বাঘা থেকে এসেছেন বাউল খ্যাপা বিদ্যুৎ সরকার। আজ সকালে আখড়াবাড়িতে তাঁর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, খোদা বক্স সাঁইজির ভাবধারায় গান করে থাকেন তিনি। অনেক আগে থেকেই সাঁইয়ের নাম ও কর্মময় জীবন নিয়ে তাঁর জানাশোনা ছিল। এবারই প্রথম আখড়াবাড়িতে এসেছেন। আজ রাতে ও মঙ্গলবার সাঁইজি ও লালনের লেখা বেশ কিছু গান করার ইচ্ছা আছে তাঁর।
খোদা বক্স সাঁইয়ের একমাত্র ছেলে বাউল আবদুল লতিফ শাহ বলেন, স্মরণানুষ্ঠানকে ঘিরে দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় আখড়াবাড়িতে এবারও বাউলদের মিলনমেলা বসছে। দূরদূরান্ত থেকে আগত সাধু-বাউলদের মঙ্গলবার দুপুরে পূর্ণ সেবার (দুপুরের আহার) মধ্য দিয়ে আয়োজনের সমাপ্তি ঘটবে।
সাইমন জাকারিয়া বলেন, ‘ফকির লালন–পরবর্তী বাংলাদেশে হাতে গোনা যে কজন সাধু-বাউল আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছেন, তাঁদের মধ্যে খোদা বক্স সাঁইজি অন্যতম। জীবদ্দশায় তিনি প্রায় এক হাজার গান লিখেছেন। যে গানগুলো দুই বাংলার বাউলদের মুখে মুখে ফেরে। ১৯৯০ সালের ১৫ জানুয়ারি (পয়লা মাঘ) তিনি প্রয়াত হন। একই বছরের একুশে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন সরকার খোদা বক্স সাঁইজিকে একুশে পদক (মরণোত্তর) দেয়।’