বরিশালে দুটি আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন মেনন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাদিক ও পংকজ
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য বরিশাল-৫ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বরিশাল সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। একইভাবে শুরু থেকে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার কথা বললেও মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনে স্বতন্ত্র মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ। তিনি এলাকায় না এসে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেন।
অন্যদিকে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের পক্ষে বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) ও বরিশাল-২ (বানারীপাড়া-উজিরপুর) আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। রাশেদ খান মেনন ঢাকা-৮ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। এবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমকে সেখানে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। মহাজোটে এ নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এর মধ্যেই মেননের পক্ষে বরিশাল-২ ও ৩ আসনে তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হলো।
রাশেদ খান মেননের পক্ষে গতকাল বুধবার প্রথমে বরিশাল-৩ আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন স্থানীয় নেতারা। পরে আজ বৃহস্পতিবার বরিশাল-২ আসনেও তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজ্জাম্মেল হক। বরিশাল-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির পক্ষ থেকে জহিরুল ইসলাম ও বরিশাল-৩ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক টিপু সুলতানও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এই দুই আসনে তালুকদার মো. ইউনুস ও সরদার খালেদ হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
বরিশালের বাবুগঞ্জের বাহেরচর ক্ষুদ্রকাঠি গ্রামে রাশেদ খান মেননের পৈতৃক বাড়ি। জাতীয় রাজনীতির বর্ষীয়ান এই নেতা ১৯৭৯ ও ১৯৯১ সালে এ অঞ্চল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী এবং সমাজকল্যাণমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
অনলাইনে জমা দিলেন পংকজ নাথ
বরিশাল-৪ (মেহেন্দিগঞ্জ-হিজলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পংকজ নাথ এবার দলীয় মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহম্মেদকে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দলীয় মনোনয়ন ঘোষণার পর পংকজের অনুসারী নেতারা বলেছিলেন, তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন না। কিন্তু আকস্মিকভাবে আজ অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন পংকজ নাথ। রিটার্নিং কর্মকর্তা ও বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. শহিদুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পংকজ নাথের বিরুদ্ধে দলের প্রার্থীর বিপক্ষে ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী দাঁড় করানো, বিপক্ষে গেলে হামলা চালিয়ে হাত-পা ভেঙে দেওয়া, কোপানোর হুমকিসহ নানা অভিযোগ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা। দলের পক্ষ থেকে এমন অভিযোগ তোলার পর গত বছর দলের সব পদ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। এবার তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। তিনি এই আসনে ২০১৪ ও ২০১৮ দুই মেয়াদে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এ বিষয়ে জানতে পংকজ নাথের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কেটে দেন। পরে খুদে বার্তা দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি। পংকজ নাথের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সুভাষ চন্দ্র সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন না বলে জানিয়েছিলেন। এরপর প্রার্থী হয়েছেন কি না, জানি না।’
সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়নপত্র জমা
বরিশাল-৫ (সদর) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাঁর পক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা দুপুরে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর আগে গত মঙ্গলবার তাঁর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়।
মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি কাউন্সিলর গাজী নঈমুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সদর আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছিলাম। আজ তা জমা দিয়েছি।’ তিনি বলেন, ৭ জানুয়ারি শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন হবে। তাঁদের মধ্যে কোনো শঙ্কা নেই। গণমাধ্যমকর্মীরা তাঁদের পরবর্তী কার্যক্রম দেখতে পাবেন।
সাদিক আবদুল্লাহ এবার সিটি নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চেয়েও পাননি। এরপর বরিশাল-৫ আসনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সংসদ সদস্য ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুককে মনোনয়ন দেওয়া হয়। মনোনয়নবঞ্চিত হওয়ার পর সাদিক আবদুল্লাহকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে উৎসাহ দিচ্ছেন মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ ফারুকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন বরিশাল সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও আওয়ামী লীগের কমিটি থেকে ছিটকে পড়া নেতা-কর্মীরা।