কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার থেকে গতকাল সোমবার দিনভর থেমে থেমে বিকট বিস্ফোরণের আওয়াজ ভেসে এলেও সন্ধ্যার পর তা থেমে যায়। আজ মঙ্গলবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ওপার থেকে কোনো বিস্ফোরণ বা গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়নি। সুনসান নীরবতায় একটি রাত কাটলেও স্বস্তিতে নেই এপারে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের বাসিন্দারা।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, কয়েক দিন ধরে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের আশপাশের এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলি হচ্ছে। পাশাপাশি বিকট শব্দে কেঁপে উঠছে টেকনাফ সীমান্ত। গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেমে থেমে সারা দিনে কয়েকটি বিকট বিস্ফোরণ শোনা গেলেও সন্ধ্যার পর থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত আর কোনো শব্দ আসেনি।
ওপারের সংঘাতময় পরিস্থিতি প্রভাব ফেলেছে এপারের বাসিন্দাদের জীবনে। সাবরাং নয়াপাড়ার বাসিন্দা সৈয়দ আলম ও শাহপরীর দ্বীপ বাজারপাড়ার আবদুল জলিল বলেন, গত কয়েক দিন টেকনাফ সীমান্তের মানুষগুলোর ঘুম ভেঙেছে বিকট শব্দে। এপারের মাটি কেঁপে উঠেছে। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তিদের যেমন-তেমন, ভয় পেয়ে শিশুদের ঘুম ভেঙেছে। ওপারের পরিস্থিতি ভালো না হওয়ায় নাফ নদীর তীরে বসবাসরত বাংলাদেশিরা আতঙ্কে আছেন বলে জানালেন এ দুজন। তাঁরা আরও বলেন, মিয়ানমারের নলবন্ন্যা এলাকায় গতকাল সন্ধ্যায় প্রচুর বিস্ফোরণ হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, বিদ্রোহীরা আরও একটি ঘাঁটি দখল করেছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, টেকনাফ সীমান্তের উত্তরাংশে হোয়াইক্য এবং পূর্ব ও দক্ষিণাংশে সাবরাংয়ের বিপরীতে নাফ নদীর ওপারে রাখাইন রাজ্য। কয়েক দিন ধরে সেখান থেকে গুলির শব্দ আসছে। স্থানীয় লোকজনের ধারণা, রাখাইন রাজ্যের মংডুর শহরের পাশের বলিবাজার, মেগিচং, কাদিরবিল, নুরুল্লাহপাড়া, মাংগালা, নলবন্ন্যা, ফাদংচা ও হাসুরাতা এলাকায় সে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীর লড়াই চলছে।
এদিকে মিয়ানমারে সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে নাফ নদী এলাকায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি ও কোস্টগার্ড। নিয়মিত টহল বাড়ানো হয়েছে। স্থলভাগেও পুলিশের টহল ও চারটি বিশেষ দল কাজ করছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে যেন কেউ অবৈধ অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে আজ সকাল ১০টা পর্যন্ত কোনো বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এটি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। মিয়ানমারের সংঘাতময় পরিস্থিতির কারণে বিজিবি, কোস্টগার্ড ও পুলিশের টহল বাড়ানো হয়েছে। সীমান্তে বসবাসরত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।