সংঘর্ষে নিহত পোশাকশ্রমিক জালালের স্ত্রী-সন্তানের পাশে এক কারখানা কর্তৃপক্ষ
গাজীপুরের কোনাবাড়ীর জরুন এলাকায় শ্রমিক-পুলিশ সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত জালাল উদ্দিনের সন্তানের ভরণপোষণ ও স্ত্রীর চাকরির দায়িত্ব নিয়েছে মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক তৈরি কারখানার কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে খরচের জন্য দেড় লাখ টাকা নগদ সহায়তাও দিয়েছে কারখানাটি।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে গাজীপুরের কাশিমপুর নয়াপাড়ায় মাল্টিফ্যাবস লিমিটেড কারখানায় আসে নিহত শ্রমিক জালালের স্ত্রী নার্গিস পারভীন ও একমাত্র কন্যা সন্তান জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়ম (৯)। পরে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মেজবা ফারুকী তাদের হাতে দেড় লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন। এ ছাড়া তিনি শিশুটির লেখাপড়া ও বিয়ে পর্যন্ত সব দায়িত্ব নেন। ওই সময় নিহত জালালের স্ত্রী কাজ করে জীবিকা নির্বাহের ইচ্ছা পোষণ করলে কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁকে চাকরির ব্যবস্থা করার অঙ্গীকার করেন।
মেজবা ফারুকী বলেন, ‘প্রথম আলোতে শিশু জান্নাতুল বাকিয়া মরিয়মের ছবিটা যেদিন ছাপা হয়েছিল, সেদিনই আমার চোখে পড়ে। ছবিটা দেখে নিজের মেয়ের কথা মনে পড়ে খুবই কান্না পায়। তখনই সিদ্ধান্ত নিই মেয়েটির জন্য কিছু একটা করার। নিজের সেই দায়বদ্ধতা থেকেই প্রাথমিকভাবে তাদের খরচের জন্য দেড় লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জান্নাতুল যত দিন লেখাপড়া করবে, যতদূর করবে, বিয়ে দেওয়া পর্যন্ত সব খরচ আমরা বহন করব।’
উল্লেখ্য, জালাল উদ্দিন (৪০) জরুন এলাকার ইসলাম গ্রুপের সুইং সুপারভাইজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের চান মিয়ার ছেলে। জরুন এলাকার ভাড়া বাসায় সপরিবার বসবাস করতেন। ৮ নভেম্বর বেতন বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনের সময় বাড়ি যাওয়ার পথে গুলিবিদ্ধ হন জালাল। এরপর তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ নভেম্বর দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মারা যান তিনি।
শিশু জান্নাতুল বাকিয়া জরুন এলাকার গাজীপুর সিটি আইডিয়াল স্কুলের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। বাবার কথা জিজ্ঞাসা করতেই সে কান্না শুরু করে। এরপর সে বলে, ‘বাবা কাজে যাওয়ার সময় বলত “বাবা তোমাকে ভালো করে লেখাপড়া করতে হবে, বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার হতে হবে।” তাই আমি ডাক্তার হতে চাই।’
নার্গিস পারভীন বলেন, ‘আমি বিএ পাস করে গৃহিণী ছিলাম। এখন মাল্টিফ্যাবস কারখানা আমাকে চাকরি দিতে চেয়েছে। এ জন্য আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমার সন্তানের দায়িত্ব নিয়েছে। এই ঋণ আমি পরিশোধ করতে পারব না। আমার মেয়েকে নিয়ে আমি এখন জীবনসংগ্রামে নেমেছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ওই কারখানার এজিএম (এইচআর অ্যান্ড এডমিন) মো. আবু সেহাব, ব্যবস্থাপক রিপুল মিয়া, সহকারী ব্যবস্থাপক খ. আহমাদুল কবির, নির্বাহী মো. ওমর হামদু, শ্রমিক প্রতিনিধি সায়লা আক্তার, আরিফা আক্তার, নাজমুল হুদা, মনির হোসেন, সোহাগ হোসেন প্রমুখ।