৪৫ আসনের বাসটি বেশ পুরোনো। কোনো আসনের কাপড় ছেঁড়া, কোনোটি বেঁকে গেছে। আবার কোনো জানালার কাচ ভাঙা। লক্কড়ঝক্কড় বাসটির শরীরে রঙের আঁচড় দিচ্ছিলেন মো. রুবেল। তিনি জানালেন, ঈদ উপলক্ষে নতুন করে সাজানো হচ্ছে বাসটি। আসন মেরামত প্রায় শেষের দিকে। এখন চলছে রঙের কাজ। দু-চার দিনের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
ঈদ সামনে রেখে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট বাস টার্মিনালে এখন চলছে এ রকম লক্কড়ঝক্কড় ও পুরোনো বাস মেরামতের কাজ। কোনোটির ভাঙা, বেঁকে যাওয়া অংশে জোড়াতালি দেওয়া হচ্ছে। কোনোটিতে লাগানো হচ্ছে জানালার নতুন কাচ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বাস রং করায় ব্যস্ত ছিলেন মো. রুবেল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘যাত্রীরা অনেক শৌখিন। রং না করলে বাসে কেউ উঠবে না। তাই ঈদের আগেই ঝকঝকে করা হবে।’
বাস টার্মিনাল ঘুরে এ রকম আরও জনা দশেক পরিবহনশ্রমিকের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। সাতটি বাস মেরামতের কাজ করছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের মধ্যে রংমিস্ত্রি মো. সম্রাট ঈগল পরিবহনের একটি বাসে রং লাগাচ্ছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাসটি অন্তত পাঁচ বছরের পুরোনো। আসন রয়েছে ২৮টি। রং লাগানো ও মেরামতের কাজ করতে ১০ থেকে ১২ দিন লাগছে। শুধু রঙের পেছনেই খরচ হচ্ছে ৪৫ হাজার টাকা।
‘হানিফ’ নামের একটি বাস মেরামতের কাজ করছিলেন তিন ব্যক্তি। তাঁদের একজন মোহাম্মদ ফরিদ প্রথম আলোকে বলেন, বাসটি ৪৮ আসনের; চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চলাচল করে। আসনগুলো মেরামত করা হয়েছে। এখন শেষ মুহূর্তে রং করা হচ্ছে। ঈদের আগের দিন থেকে সড়কে নেমে যাবে বাসটি।
বাস টার্মিনালের পরিবহনশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দুই ঈদেই বাসমালিকদের ব্যবসা চাঙা হয়। মূলত যাত্রী টানতে পুরোনো বাসগুলো রঙিন করে আকর্ষণ বাড়ানো হচ্ছে। যদিও রাস্তায় অনেক সময় বিকল হয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় বাসের চালক-যাত্রীদের। চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট আঞ্চলিক বাস টার্মিনাল থেকে কক্সবাজার, মহেশখালী, চকরিয়া, কাপ্তাই, আনোয়ারা, বাঁশখালী, সাতকানিয়াসহ দক্ষিণের জেলা–উপজেলায় বাস চলাচল করে।
ঈদ এলেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে এ রকম পুরোনো বাস চলাচল করে। রোজার শুরুতেই বাসগুলো মেরামতের কর্মযজ্ঞ শুরু হয়। তবে যেসব বাসের ফিটনেস নেই, সেসব বাস সড়কে চলবে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণাঞ্চল সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন চট্টগ্রাম থেকে দক্ষিণাঞ্চলে ছয় শতাধিক বাস চলাচল করে। কিছু বাসের ফিটনেস সনদ নেই, এটা সত্য। তবে প্রশাসন বিভিন্ন সময় অভিযান চালাচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত এক বছরের জন্য বাসের ফিটনেস সনদ দেওয়া হয়। সনদ বছর বছর নবায়ন করতে হয়। ফিটনেস সনদ ছাড়া কোনো যানবাহন সড়কে চলাচল করার নিয়ম নেই। এ বিষয়ে ধারাবাহিকভাবে অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। ঈদ ঘিরেও অভিযান চলবে।