নারীনেত্রীর সাক্ষাৎকার

নোয়াখালীর ধর্ষণ মামলার রায় বার্তা দেয়, অপরাধ করলে সাজা পেতে হবে

পাঁচ বছর আগে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটের রাতে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন নোয়াখালীর সুবর্ণচরের ৪০ বয়সী এক নারী। স্বামী ও সন্তানদের বেঁধে রেখে ঘরের বাইরে নিয়ে তাঁকে ধর্ষণ ও মারপিট করা হয়। ওই ঘটনায় নারীর স্বামীর করা মামলার রায়ে ১০ জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আলোচিত ওই ঘটনার মামলার রায় নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে নোয়াখালী নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীনের সঙ্গে।

প্রথম আলো:

সুবর্ণচরের আলোচিত ধর্ষণ মামলার রায়ে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৬ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। রায়ের বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?

লায়লা পারভীন: রায় ঘোষণার সময় আমি আদালতকক্ষে উপস্থিত ছিলাম। পুরো রায় শুনেছি। এটি একটি যুগান্তকারী রায়। এই রায়ের মধ্য দিয়ে সমাজে একটি বার্তা যাবে যে অপরাধী যত ক্ষমতাশালী হোন, অপরাধ করলে তাঁর সাজা পেতে হবে। তা ছাড়া ধর্ষণের ঘটনাটিতে যে শুধু ওই নারীই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তা নয়। এতে রাষ্ট্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিষয়টি রায় ঘোষণার সময় আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে।

প্রথম আলো:

মামলার রায়ের কোন বিষয়টি আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে?

লায়লা পারভীন: রায় ঘোষণাকালে বিচারক বিভিন্ন সাক্ষীদের বক্তব্য, আসামিদের স্বীকারোক্তির পাশাপাশি আইনের বিধান এবং ইতিপূর্বের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার রেফারেন্স যেভাবে করেছেন, তাতে রায়ে সাজার প্রাসঙ্গিকতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর ফলে মামলাটি আপিলের পর্যায়ে গেলেও রায়ের খুব একটা হেরফের হবে বলে আমি মনে করি না।

প্রথম আলো:

এই রায় নোয়াখালীতে ধারাবাহিক নারী নির্যাতনের ঘটনা কমিয়ে আনতে কোনো ভূমিকা রাখবে?

লায়লা পারভীন: নিঃসন্দেহে ভূমিকা রাখবে। এই রায় ঘিরে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো সম্ভব। সরকারি–বেসরকারি সংস্থা, গণমাধ্যম যদি একযোগে এই নারী নির্যাতনের ঘটনার রায় নিয়ে সচেতনতার বার্তা সমাজে পৌঁছাতে পারে, আশা করা যায় এটির ইতিবাচক একটি প্রভাব পড়বে।

প্রথম আলো:

নোয়াখালীতে নারী নির্যাতনের ঘটনা না কমার কারণ কী?

লায়লা পারভীন: প্রান্তিক পর্যায়ে নারী নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটছে। এর অন্যতম কারণ দারিদ্রতা, মেয়েদের আর্থিক ক্ষমতায়ন না থাকা, বিচারে দীর্ঘসূত্রতা। একের পর এক ঘটনা যে হারে ঘটছে, সে অনুপাতে বিচার শেষ হয় না। এতে বিচারের যে রায়, সেই বার্তা ঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছায় না। এসব কারণেই নারী নির্যাতনের ঘটনা কমছে না।

প্রথম আলো:

নারী নির্যাতনের ঘটনা কমিয়ে আনতে সামাজিক সংগঠনগুলো কতটা ভূমিকা রাখতে পারে?

লায়লা পারভীন: সামাজিক সংগঠনগুলো অনেক ক্ষেত্রে লোকদেখানো কাজ করে। তারা যদি আন্তরিকতা দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, গ্রামে গ্রামে সভা-সমাবেশ করে মানুষকে সচেতন করে এবং এসব কাজে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গকে সম্পৃক্ত করে; তাহলে নারী নির্যাতন বন্ধে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।