‘আগুনি চোকির পলকে সপ শেষ হয়ে গ্যালো, কিচ্চুই কত্তি পারিনি’

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার শ্রীনগরে আগুনে পুড়ে যাওয়া পানের বরজ। বৃহস্পতিবার সকালে
ছবি: সংগৃহীত

‘অনেক ধার-দিনা কইরে দুই বিগে জমিতি বরজ ঘিরিলাম। সপ লাইনে গাচে গাচে বিশাল পানও ধরিল। এই পান নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। কিন্তু বুদবার রাতির আগুনি চোকির পলকে সপ শেষ হয়ে গ্যালো। দাঁড়ি দাঁড়ি আগুন জ্বলা দেকলিউ কিচ্চুই কত্তি পারিনি।’

ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন পানবরজের মালিক রইচ উদ্দিন। আয়ুব হোসেন বেয়াই রইচ উদ্দিনকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে নিজেই কাঁদতে থাকেন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জামজামি ইউনিয়নের শ্রীনগর গ্রামে আগুনে অন্তত ১২ বিঘা জমির পানবরজ ও ৩ বিঘা জমির কলাখেত পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পানবরজমালিকদের একজন এই রইচ উদ্দিন।

বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত চাষি ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গ্রামের নেফাজ উদ্দিনের পানের বরজে প্রথম আগুন ধরে। এরপর আলী হোসেনের বরজ হয়ে মুহূর্তেই সে আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং একের পর এক বরজ পুড়তে থাকে। আলমডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু থেকে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নেফাজউদ্দিনের ৩ বিঘা, আলী হোসেনের ১০ কাঠা, মানোয়ার হোসেনের ১৫ কাঠা, খাজা উদ্দিনের ৫ কাঠাসহ ২১ জন কৃষকের পানের বরজ এবং আদম আলীসহ ৫ জন কৃষকের কলাখেত পুড়ে গেছে।

ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, আলমডাঙ্গা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনে ফোন দেওয়ার প্রায় দেড় ঘণ্টা পর আসে। পানিবাহী গাড়িতে কোনো পানি ছিল না। তবে ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকর্তা মো. আল মামুন অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, খবর পাওয়ার ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের দল রওনা দেয়। কিন্তু ঘটনাস্থল ১৪ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় এবং সড়কটিতে নির্মাণকাজ চলায় ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে কিছুটা দেরি হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহেনা খাতুন জানান, ২৬ জন কৃষকের মোট ১৫ বিঘা জমির পান ও কলাখেত নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা হচ্ছে।