মোটরসাইকেল থেকে ফেলে দিয়েই সাংবাদিককে পেটানো শুরু করে সন্ত্রাসীরা
জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার পাটহাটি মোড়। গত বুধবার রাত ১০টা ১৭ মিনিট। সাংবাদিক গোলাম রব্বানি মোটরসাইকেল চালিয়ে ওই মোড় পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ একজন দৌড়ে গিয়ে চলন্ত মোটরসাইকেলটি পেছন দিক থেকে টেনে ধরে এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। গোলাম রব্বানি পড়ে যাওয়ার পরপরই একদল সন্ত্রাসী ওই সাংবাদিককে টেনেহিঁচড়ে কিল-ঘুষি ও ব্যাপক মারধর করতে থাকে।
সিসিটিভি ফুটেজে এই দৃশ্য দেখা গেছে। পুলিশ জানিয়েছে, ওই ফুটেজ সংগ্রহ করে হামলাকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে। সবাইকে ধরার চেষ্টা চলছে। ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করা হয়েছে।
গোলাম রব্বানি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা আড়াইটার দিকে মারা যান। তিনি ‘বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম’–এর জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে ‘একাত্তর টিভির’ বকশীগঞ্জ উপজেলা সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন।
অভিযোগ উঠেছে, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম লোকজন দিয়ে তাঁকে হত্যা করিয়েছেন। মাহমুদুল আলম সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, গোলাম রব্বানিকে মারতে মারতে সড়কের এক পাশ থেকে আরেক পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই পাশ সিসিটিভির আওতায় নেই। পুলিশ জানায়, মারধরের একপর্যায়ে গোলাম রব্বানি অচেতন হয়ে পড়লে সন্ত্রাসীরা তাঁকে ফেলে পালিয়ে যায়।
গোলাম রব্বানির পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পেশাগত দায়িত্ব পালন শেষে বাড়িতে ফেরার পথে হামলার শিকার হন তিনি। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে রাতেই তাঁকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে গতকাল সকালে তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
গোলাম রব্বানি বকশীগঞ্জ উপজেলার নিলাখিয়া ইউনিয়নের গোমের চর গ্রামের আবদুল করিমের ছেলে। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।
গোলাম রব্বানির স্ত্রী মনিরা বেগম সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, সংবাদ প্রকাশের জের ধরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম তাঁর (গোলাম রব্বানি) ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন। আগেও নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করেছেন। ওই ইউপি চেয়ারম্যানের লোকজনই তাঁকে হত্যা করেছেন। তিনি এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
নিহত সাংবাদিকের শ্বশুর বীর মুক্তিযোদ্ধা মঞ্জুরুল ইসলাম মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সারা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে, চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের লোকজনই আমার জামাইকে হত্যা করেছে। তার তিন সন্তানের এখন কী হবে! হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
স্থানীয় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার বিষয় নিয়ে গোলাম রব্বানি কয়েকটি সংবাদ প্রকাশ করেন। এতে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম ক্ষুব্ধ হন। বেশ কয়েকবার চেয়ারম্যান তাঁকে হুমকিও দিয়েছিলেন। এ ছাড়া গত ১১ এপ্রিল গোলাম রব্বানিকে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতাও মারধর করেছিলেন। তবে ওই যুবলীগ নেতার বিষয়টি গোলাম রব্বানির সঙ্গে আপস মীমাংসা হয়েছিল।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভির ফুটেজ দেখে ইতিমধ্যে চারজনকে আটক করা হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
জানতে চাইলে জামালপুরের পুলিশ সুপার নাছির উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত সাংবাদিকের ওপর হামলাকারীদের সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পুলিশের পাঁচটি দল মাঠে কাজ করছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে এ ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি।
এদিকে গোলাম রব্বানি হত্যার ঘটনায় বকশীগঞ্জের স্থানীয় সাংবাদিকেরা গতকাল বিকেলে অবস্থান কর্মসূচি পালন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।