সুন্দরবনে ৭০ কেজি চিংড়িসহ নৌকা জব্দ

সুন্দরবন থেকে জব্দ করা হয়েছে চিংড়ি, জালসহ নৌকা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের সামনেছবি : প্রথম আলো

সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে নদী থেকে শিকার করা ৭০ কেজি চিংড়িসহ একটি নৌকা জব্দ করেছেন বন বিভাগের সদস্যরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা রেঞ্জের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের আওতাধীন জোলাখালীর খালে এ অভিযান চালানো হয়।

কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনের কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, আজ সকালে টহলের সময় খাল ধরে কিছু দূর এগিয়ে গেলে তাঁরা একটি নৌকা দেখতে পান। তাঁরা নৌকার কাছাকাছি যাওয়ার আগেই জেলেরা নৌকা থেকে লাফ দিয়ে বনের গহিনে পালিয়ে যান। কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তবে তাঁদের ফেলে যাওয়া নৌকা তল্লাশি করে তিনটি বস্তায় ভরা বিষ দিয়ে শিকার করা ৭০ কেজি চিংড়ি ও নিষিদ্ধ ঘন ফাঁসের জাল জব্দ করা হয়েছে।

বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল আরও বলেন, ‘আমরা গত রাতে আরও দুটি নৌকা জব্দ করেছি। সুন্দরবনের কেওড়াকাটা খাল ধরে দুটি নৌকা গহিন জঙ্গলে যাচ্ছিল। নৌকা দুটিকে থামতে বললে নৌকায় থাকা জেলেরা বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। তবে ওই দুই নৌকায় ছিল বরফ।’

আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সরেজমিনে সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, আটক নৌকাগুলো ফরেস্ট স্টেশনের পাশে রাখা। একটি নৌকার মধ্যে চারটি বস্তায় ভরা চিংড়ি। বিষ দিয়ে শিকার করা চিংড়িতে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ। পাশেই একটি ঘন ফাঁসের নিষিদ্ধ ভেসাল জাল।

পাশে দাঁড়ানো স্থানীয় কয়েকজন বনজীবী জেলে জানালেন,  জোয়ারের সময় পানিতে বনের খাল ভরে উঠলে দুই প্রান্তে ভেসাল জাল (এক ধরনের ছোট ফাঁসযুক্ত জাল) দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। ওই ফাঁদের মধ্যে কীটনাশক দিয়ে অপেক্ষা করেন জেলেরা। পরে বিষের প্রতিক্রিয়ায় মাছগুলো ভেসে উঠলে ধরে আনা হয়।

আরও পড়ুন

সুন্দরবনের গহিনে বরফ পরিবহনের বিষয়ে স্থানীয় বনজীবী জেলে আনারুল ইসলাম বলেন, বনের মধ্যে বিষ দিয়ে মাছ ধরা কয়েকটি সংঘবদ্ধ দল রয়েছে। যাদের নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় কিছু মাছ ব্যবসায়ী। ওই জেলেরা ডাঙায় আসেন না, বনের মধ্যেই থাকেন। এক–দুদিন পরপর ডাঙায় থাকা মহাজন মাছ ব্যবসায়ীরা বরফের নৌকা পাঠান বিষ দিয়ে ধরা মাছ সংরক্ষণ করে লোকালয় আনার জন্য। মাঝেমধ্যে এক–দুটি নৌকা ধরা পড়ে। মাছ ব্যবসায়ীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন।

সুন্দরবনের কাশিয়াবাদ ফরেস্ট স্টেশন কর্মকর্তা নির্মল কুমার মণ্ডল বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে অপরাধীদের হাতেনাতে ধরা কঠিন। বনরক্ষীদের দেখলেই নৌকা ও মাছ ফেলে অপরাধীরা গহিন বনের মধ্যে পালিয়ে যায়। তাদের পিছু নিলেও তারা ঘন জঙ্গলে ঢুকে যায়। এ কারণে অধিকাংশ অভিযানে কেউ আটক হয় না। আবার অনেকে ডাঙায় বসে মহাজনী করেন। তাঁদের অধীন জেলেরা ধরা পড়লেও গডফাদারদের নাম বলেন না। তারপরেও ঝুঁকি নিয়ে অনেক অপরাধীকে আটক করা হয়। আজ জব্দ করা বিষাক্ত ৭০ কেজি চিংড়ি কয়রা জ্যেষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারকের অনুমতি নিয়ে নষ্ট করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

সুন্দরবনের বন্য প্রাণী এবং নদী-খালের মাছের বিচরণ ও প্রজনন কার্যক্রমের সুরক্ষায় গত ১ জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বন্ধ সুন্দরবনের দুয়ার। এই তিন মাস সুন্দরবনে পর্যটকের প্রবেশ, সাধারণ মানুষের চলাচলসহ নদী-খালে মাছ, কাঁকড়া ধরা নিষিদ্ধ থাকে।