ফরিদপুরে ভুবনেশ্বর নদে কুমির, আতঙ্কে স্থানীয় লোকজন
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মা নদীর শাখা ভুবেনশ্বর নদে একটি কুমির দেখা গেছে। গত বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নের শিকদার ডাঙ্গী গ্রামের ভুবনেশ্বর নদে প্রথম কুমিরটি দেখা যায়। পরে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টার মধ্যে কয়েকবার কুমিরটি ভেসে ওঠে। এতে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
এর আগে গত বছর ফরিদপুর সদরের নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নে একটি বড় আকারের পুকুরে কুমির দেখা গিয়েছিল। পরে কুমিরটি উদ্ধার করে গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নেওয়া হয়।
বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে চরভদ্রাসনের শিকদার ডাঙ্গী গ্রামের বাসিন্দা বাচ্চু শেখের স্ত্রী সিমা বেগম প্রথম তাঁর বাড়ির সামনে নদের ঘাটে কুমিরটি দেখতে পান। পরে প্রায় ৩০০ মিটার দক্ষিণে লোকমান মাতুব্বরের বাড়ির সামনে এক সাঁকোর নিচে অবস্থান নেয় কুমিরটি। এ নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে কুমিরের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
সিমা বেগম বলেন, বুধবার বিকেলে বাড়ির সামনে রাস্তায় আড়া থেকে কাপড় আনতে যান। সে সময় নদের ঘাটে কুমিরটি দেখতে পান। পরে তিনি তাঁর স্বামী বাচ্চু শেখকে বিষয়টি জানান। চরভদ্রাসন উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান কাউছার ব্যাপারী বলেন, তিনি স্থানীয় ব্যক্তিদের কাছে খবর পেয়ে প্রশাসনকে জানান। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এলাকার মানুষকে সাবধান করে। সতর্ক করে বিভিন্ন মসজিদ থেকে মাইকিংও করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল আটটার দিকে লোকমান মাতুব্বরের বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার দূরে তেলেডাঙ্গী বাজারের পাশে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেনের বাড়ির সামনে নদীতে আবার কুমিরটি দেখা যায়। এ সময় স্থানীয় বাসিন্দারা জাল দিয়ে তা উদ্ধারের চেষ্টা করেন। তবে আজ শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কুমিরটি আর দেখা যায়নি। ভুবনেশ্বর নদটি চরভদ্রাসনের হাজিগঞ্জ বাজার এলাকায় পদ্মা নদী থেকে শুরু হয়ে ২৩ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সদরপুরের পেঁয়াজখালী এলাকায় আড়িয়াল খাঁ নদের সঙ্গে মিশেছে।
কুমিরটি উদ্ধার করে নিরাপদ কোনো জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন গাজীরটেক ইউনিয়নের চর অযোধ্যা ঢালারপাড় এলাকার বাসিন্দা হাবিব শেখ। একই এলাকার বাসিন্দা আবদুল হালিম বলেন, কুমিরটি হাজিগঞ্জ বাজার এলাকা দিয়ে পদ্মা নদী থেকে ঢুকে পড়তে পারে। ধারণা করা যায়, এটি মিঠাপানির কুমির। খাদ্যের সন্ধানে হয়তো পদ্মা নদীর শাখা ভুবনেশ্বর নদে চলে এসেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদী মোর্শেদ বলেন, তিনি কুমিরের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানিয়েছেন। নদে মানুষকে নামতে নিষেধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে নদের পাড়ে লাল পতাকা টাঙাতে বলা হয়েছে।
আজ দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কুদ্দুস ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, কুমিরটি কোনো বদ্ধ জায়গায় আটকা পড়েনি। এলাকাবাসী তাকে বিরক্ত না করলে সে নির্বিঘ্নে চলে যাবে। এ বিষয়ে এলাকাবাসীর সতর্কতা প্রয়োজন। কুমিরটি যদি উদ্ধার করার প্রয়োজন হয়, তবে পরবর্তী সময়ে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।