চারার সংকটে আমন আবাদ ব্যাহত, চিন্তিত কৃষক

অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উচ্চ জোয়ারে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোলায় আমন ধান আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকেরা বেশি দামে কিনে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। গত রোববার ভোলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

কিছুদিনের মধ্যে আমন আবাদের সময় শেষ হয়ে যাবে। অথচ ভোলায় চারার সংকটের কারণে অনেক জমিতে চারা রোপণ করতে পারেননি কৃষকেরা। কিছু স্থানে চারা পেলেও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। অতিরিক্ত বৃষ্টির সঙ্গে উচ্চ জোয়ারের পানিতে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় চারার সংকট দেখা দিয়েছে। এতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না বলে কৃষকেরা আশঙ্কা করছেন।

ভোলা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন কবির জানান, ভোলায় চলতি মৌসুমে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯৩৬ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। লক্ষ্য পূরণে আমন আবাদের জন্য ২৬ হাজার কৃষককে পাঁচ কেজি করে বীজ ও ২০ কেজি করে বিভিন্ন রকম সার দেওয়া হয়েছে।

ভোলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উচ্চ জোয়ারে বীজতলা নষ্ট হওয়ার কারণে কৃষক ৩-৪ বার বীজ বুনেও আশানুরূপ চারা পাননি। কৃষি কর্মকর্তারা জমিতে ফাঁকা ফাঁকা করে আমনের চারা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। এরপর যখন গোছা বড় হবে, তখন গোছা থেকে চারা নিয়ে ফাঁকা জায়গায় রোপণ করতে হবে।

সম্প্রতি ভোলার সদর উপজেলা ও আশপাশ ঘুরে দেখা যায়, সব খেত পানিতে টইটম্বুর। জোয়ারে খাল উপচে খেতে পানি ঢুকেছে। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি নামছে না। রোদ ওঠায় পানি শুকাতে শুরু করেছে। এ পানির মধ্যেই কিছু কৃষককে চারা রোপণ করতে দেখা যায়। তবে বেশির ভাগ জমি ফাঁকা।

সদরের বিভিন্ন এলাকার ৫০ জন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে ১ কেজি ধানের আমনের চারা ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু এ সময়ে ৪০০-৬০০ টাকায়ও কৃষক ধানের চারা কিনতে পারছেন না।

সদর উপজেলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নের পক্ষিয়া গ্রামের কৃষক আবদুল বারেক গোলদার বলেন, তিনি দেড় কানি (২৪০ শতাংশ) জমি তৈরি করেছেন আমনের জন্য। প্রথমে ৫০ কেজি ধানের বীজতলা করেছিলেন। কিন্তু পানিতে তা নষ্ট হওয়ার পরে আবার ৩০ কেজির বীজতলা করেছেন। কিন্তু তারপরও চারার সংকট পড়েছে। গত শনিবার তিনি ৫ কেজি ধানের চারা সংগ্রহ করেছেন ৩ হাজার টাকায়। সে চারা আনতে আরও ৫০০ টাকা খরচ হয়েছে। এত কিছুর পরও পুরোটা জমিতে আমন লাগাতে পারবেন কি না, শঙ্কায় আছেন।

অতিরিক্ত বৃষ্টি ও উচ্চ জোয়ারে চারা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ভোলায় আমন ধান আবাদ ব্যাহত হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে কৃষকেরা বেশি দামে কিনে আমন ধানের চারা রোপণ করছেন। গত রোববার ভোলার পশ্চিম ইলিশা ইউনিয়নে
ছবি: প্রথম আলো

ভেদুরিয়া চরকালি গ্রামের মো. মহসিন বলেন, ‘বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে সব ডুবে গেছে। আমন ধানের বীজতলায় এক মণ ধান বুনেছিলেন চারা করার জন্য, এখন সব পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আমন লাগানোর মৌসুম চলে যাচ্ছে, কিন্তু জালার (চারা) অভাবে খেত তৈরি করতে পারছেন না।’

লালমোহন উপজেলার রমাগঞ্জ ইউনিয়নের বিশাল এলাকা নিয়ে সাতদরুন বিল। বিলটি বেতুয়া খালসংলগ্ন। টানা বৃষ্টি আর জোয়ারের পানি একত্র হওয়ায় পানি নামার বদলে জলাবদ্ধতায় ওই বিলের আশি ভাগ কৃষকের বীজতলা নষ্ট হয়ে গেছে। যাঁরা মাটি ফেলে উঁচু করে বীজতলা তৈরি করেছেন, তাঁদের চারাই ভালো আছে।

কৃষক আনিছুল হক বলেন, তিনি সাতদরুন ও আন্দিখালি বিলে ১৬০ শতাংশ জমিতে আমন আবাদের জন্য ৫ শতাংশ জমিতে বীজতলা করেছিলেন। তাঁর প্রায় ৬০ ভাগ চারা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখেন, এক কেজি বীজের চারা এক হাজার টাকা।

ওই বিলের ১২ জন কৃষক বলেন, খালের মধ্যে ভাগ ভাগ করে জাল বসিয়ে অনেকে মাছ চাষ করছেন। শাখা খালের অনেক স্থানে মাটির বাঁধ দেওয়া হয়েছে। ফলে পানি নামতে পারছে না।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক কৃষিবিদ এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বলেন, লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২০ শতাংশ জমি অনাবাদি থাকতে পারে। তবে ভোলার কৃষক দেরিতে হলেও জমিতে আমনের আবাদ করবেন। তাঁরা ফাঁকা করে এবং কম করে চারা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছেন। পরে গোছা মোটা হলে গোছা থেকে কিছু চারা ছিঁড়ে রোপণ করে ক্ষতি কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া যেতে পারে।