তিন বাঘের দখলে ছিল বন কার্যালয়, কর্মীরা ছিলেন অবরুদ্ধ

চান্দেশ্বর ফরেস্ট কার্যালয় এলাকায় পুকুরের ধারে দুটি বাঘছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের একটি টহল ফাঁড়ি প্রায় ১৬ ঘণ্টা ধরে দখলে রেখেছিল তিনটি বেঙ্গল টাইগার। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বনের সুপতি স্টেশনের চান্দেশ্বর ফরেস্ট কার্যালয় এলাকায় অবস্থান নেয় দুটি বাঘ। পরে সেখানে এদের সঙ্গে যোগ দেয় আরও একটি বাঘ।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বাঘ তিনটি গতকাল দুপুর থেকে আজ শনিবার সকাল পর্যন্ত বন অফিসের সামনে অবস্থান করায় সেখানে কর্মরত বন বিভাগের পাঁচ কর্মী কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা সুফল রায় প্রথম আলোকে বলেন, সেখানকার বনকর্মীরা গতকাল দুপুরে পুকুর ঘাটে বাঘ দেখতে পান। সাধারণত ওই পুকুরে পানি পান করতে আসে বাঘ। তবে পানি পান করে বাঘ আবার বনের গাছপালা আচ্ছাদিত জঙ্গলে চলে গেলেও বাঘগুলো সেখানেই অবস্থান করে। এতে বন অফিসে থাকা পাঁচ বনরক্ষী সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন। দুপুর থেকে সারা রাত বাঘগুলো সেখানে ছিল। তবে সকাল থেকে বন অফিসের কাছাকাছি বাঘগুলোকে আর দেখা যাচ্ছে না। আপাতত মনে হচ্ছে বাঘগুলো হয়তো বনের ভেতরে চলে গেছে।

চান্দেশ্বর ফরেস্ট টহল ফাঁড়ির ইনচার্জ ফারুক শেখ মুঠোফোনে জানান, প্রথমে পুকুর পাড়ে বাঘ দুটি দেখে তাঁরা ভয় পেয়ে যান। পরে অপর চার বনরক্ষী দ্রুত বাসায় ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন। বাঘ দুটি পুকুরে নেমে পানি পান শেষে কিছু সময় পুকুর পাড়ে বিশ্রাম নেয়। পরে সামান্য পথ ঘুরে এসে অবস্থান নেয় রান্নাঘরের পাশে। সেই থেকে আতঙ্কিত ও অবরুদ্ধ তাঁরা।

পুকুর থেকে একটি বাঘ কার্যালয়ের অন্য পাশে অবস্থান করে
ছবি: সংগৃহীত

দিবাগত রাত ১২টার দিকেও পুকুর পাড়ে বাঘগুলো দেখা যায় কখনো গড়াগড়ি খাচ্ছে আবার কখনো রান্নাঘরের পাশে এসে বিশ্রাম নিচ্ছে। এমন দৃশ্যের ছবি ধারণ করতে গিয়ে তাঁদের হাত-পা কাঁপছিল।

পরে রাতে আরও একটি বাঘ সেখানে যোগ দেয়। সারা রাত বনরক্ষীরা পুকুর পাড়ে টর্চ লাইটের আলো জ্বেলে তিনটি বাঘের উপস্থিতি শনাক্ত করেন। সকালেও বাঘ তিনটি পুকুর পাড়ের অদূরে বন অফিসের কাছাকাছি ঘোরাঘুরি করছিল। প্রায় ১৫ ঘণ্টা বাঘগুলো অফিসের আসে পাশে ছিল। এখন দেখা না গেলেও অফিসের দক্ষিণ পাশে নদী তীরে অবস্থান করছে বলে ধারণা তাঁর।

এ ব্যাপারে শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক সামসুল আরেফিন বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে বন বিভাগের অফিস থাকলেও সাধারণত বাঘ এ রকমের আচরণ করে না। এক জোড়া বাঘ বিকেল থেকে চান্দেশ্বর অফিস এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। টিন পিটিয়ে শব্দ করা হলেও বাঘ দুটি তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেনি।