মেয়র খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা এমপি শাহরিয়ারের

বাঘা মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের জানাজার আগে বক্তব্য দেন সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম
ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

রাজশাহীর বাঘায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নিহত হওয়ার ঘটনায় সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে মামলা করার ঘোষণা দিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। মামলায় মদদদাতা হিসেবে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহন) আসনের সংসদ সদস্য মো. আসাদুজ্জামান, বাঘা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিনকেও আসামি করা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে উপজেলার বাঘা মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আশরাফুল ইসলামের জানাজার আগে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এসব কথা বলেন।

জানাজায় শাহরিয়ার আলমসহ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী আব্দুল ওয়াদুদ (দারা), জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মীর ইকবাল, রাজশাহী নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার, রাজশাহী-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিনসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও এলাকাবাসী অংশ নেন। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অনিল সরকার যাওয়ার পর দলের নেতা-কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। তিনি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামানের অনুসারী।

জানাজার আগে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘খুনি আক্কাছ, খুনি মেরাজ। তাদের পেছনে মদদদাতা আছে। দুই বছর আগে আক্কাছ বহিষ্কৃত হয়েছিল আওয়ামী লীগ থেকে। খায়রুজ্জামান লিটন নিজের মুখে সেই কথা এখানে বলেছিলেন। এস এম কামাল বলেছিলেন সে বহিষ্কৃত। এই ঘোষণার সাত দিনের মাথায় খায়রুজ্জামান লিটনের গাড়িতে আক্কাছ ও মেরাজকে ঘুরতে দেখা গেছে। আমরা জবাব চাই, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের কাছে। তিনি আজ জানাজায় অনুপস্থিত কেন? তাঁর সৎসাহস নেই কেন? অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দিনের (লাভলু) কাছে জবাব চাই, সে কেন আজ পলাতক? খুনের মামলায় দুজন সশরীর উপস্থিত ছিল। পেছন থেকে মদদদাতা হিসেবে আসাদুজ্জামান, এ এইচ এম খায়রুজ্জামান, লায়েব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হবে। তাঁদের শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথে থাকব।’

বাঘা শান্তিপূর্ণ জায়গা উল্লেখ করে শাহরিয়ার আলম বলেন, বাঘা শান্তিপূর্ণ জায়গা, পুণ্যভূমি। সেই বাঘাকে অশান্ত করার অপচেষ্টা শুরু আজ থেকে দু–তিন বছর আগে। এর আগে একাধিক ঘটনা ঘটেছে, যেখানে আরও অনেকেই মারা যেতে পারত। তাঁরা ছাড় দিয়েছেন বারবার। কখনো বাবুলের (আশরাফুল ইসলাম) ওপর দিয়ে গেছে, কখনো অন্যদের মাথার ওপর দিয়ে গেছে। আজ বাবুলের জীবনের ওপর দিয়ে গেল। তারা অব্যাহতভাবে অস্থির পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন
রাজশাহীর বাঘা মডেল উচ্চবিদ্যালয় মাঠে আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে
ছবি: ছবি: প্রথম আলো

প্রশাসনের উদ্দেশে শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘এই হত্যার পেছনে মদদদাতা, গডফাদার রয়েছে। যারা বাঘা থেকে শহরে গিয়ে শক্তি সঞ্চয় করে, যে ব্যক্তিদের নাম বললাম, আসামিদের টেলিফোন নম্বরের সঙ্গে সাত দিনের টেলিফোন নম্বর মিলিয়ে নিন। তাঁদের সঙ্গে যদি দিনে পাঁচবার কথা না হয়, আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে চলে যাব। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, আমরা আর সামনের দিকে সহ্য করব না।’

শাহরিয়ার আলম আরও বলেন, ‘দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। যাঁরা মদদদাতা, তাঁদের প্রতিটি নাম সেখানে লিপিবদ্ধ থাকবে। তদন্ত করার দায়িত্ব তদন্তকারীদের; বিচার করার দায়িত্ব বিচারপতিদের। তাঁদের হাতেই বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হবে। কিন্তু বাঘার দায়িত্ব আমাদের। সবাই শান্তিপূর্ণ থাকবেন।’

জানাজায় আশরাফুল ইসলামের ছেলে আসিক জাবেদও বক্তব্য দেন। এ সময় তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে তাঁর বাবা হত্যার বিচার চান।

আরও পড়ুন

গতকাল বুধবার বিকেল সাড়ে চারটায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আশরাফুল ইসলাম। রাতেই ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ নেওয়া হয় বাঘায়। গত শনিবার উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে থানার ওসিসহ অন্তত ৫০ নেতা-কর্মী আহত হন। সেদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে একাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুরুতর আহত অবস্থায় উপজেলা চত্বরের ভেতর থেকে আশরাফুল ইসলামকে উদ্ধার করা হয়। তাঁর মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত ছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৭ জুন মৌখিকভাবে বাঘা উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ের দলিল লেখক সমিতির নতুন কমিটি করে দেন সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলম। এতে সভাপতি হন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক পদ পান পাকুড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক সামিউল আলম ওরফে নয়ন সরকার। এরপর ১০ জুন সমিতির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনায় অন্তত ১৫ জন আহত হন। পরে ২০ জুন দলিল লেখক সমিতির কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লায়েব উদ্দিন ও পৌরসভার মেয়র আক্কাস আলীর অনুসারীরা। এরপর ২২ জুন আবারও পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে জেলা যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পাকুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেরাজুল ইসলাম রয়েছেন। সংঘর্ষের পরদিন মামলা করেন উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহিনুর রহমান। তিনি দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য শাহরিয়ার আলমের অনুসারী। মামলায় এক নম্বর আসামি পৌরসভার মেয়র আক্কাছ আলী।