গাজীপুরে পাশপাশি ছয় কলোনিতে আগুনে পুড়ল শ্রমিকদের ১০৮টি ঘর
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় পাশাপাশি থাকা ছয়টি শ্রমিক কলোনিতে অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ১০৮টি ঘর পুড়ে গেছে। আগুনে এসব ঘরে থাকা ফ্যান, ফ্রিজ, খাট, আলমিরাসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
আজ শুক্রবার দুপুরে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে হয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। গ্যাস সিলিন্ডার থেকে এই আগুনের সূত্রপাত ঘটে বলে জানিয়েছেন কলোনির বাসিন্দারা।
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. কাউছার আহাম্মেদ বলেন, জুম্মার নামাজের সময় আগুনের ঘটনাটি ঘটে। ঘিঞ্জি এলাকায় কলোনি নির্মাণ করায় ফায়ার সার্ভিস সঠিক সময়ে আগুনের কাছে পৌঁছাতে পারেনি। এতে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, কালিয়াকৈর উপজেলার তেলিরচালা এলাকায় জমি ভাড়া নিয়ে মো. সুফিয়ান, সারোয়ার মিয়া, রায়হান মিয়া, নাজিম উদ্দিন, সফিক মিয়া ও মরহম আলী প্রথম ছয়টি কলোনি নির্মাণ করেন। পরে সেখানে স্থানীয় কারখানা শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দেন। প্রতিটি কক্ষে একটি করে পরিবার বসবাস করে।
বাড়ির মালিক ও কলোনির বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আজ দুপুরে মো. সারোয়ার মিয়ার কলোনির একটি কক্ষে গ্যাস সিলিন্ডার দিয়ে রান্না করার সময় আগুন ধরে যায়। মুহূর্তের মধ্যে আগুন পাশপাশি ছয়টি কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় বাসিন্দারা ছোটাছুটি করে কিছু কিছু মালামাল বের করার চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট দুপুর আড়াইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে সুফিয়ানের ২৪টি, সারোয়ার মিয়ার ২২টি, রায়হান মিয়ার ২০টি, নাজিম উদ্দিনের ২০টি, সফিক মিয়ার ১২টি ও মরহম আলীর ১০টি ঘর পুড়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পাশাপাশি ছয়টি কলোনির পুরোটাই টিনের ছাউনি ও টিনের বেড়া। একটি কলোনি আরোকটির সঙ্গে লাগানে। ছোট ছোট কক্ষে প্রতিটিতে একটি করে পরিবার বসবাস করে। আগুনে পুড়ে যাওয়া ঘরে আসবাবপত্র, ফ্যান, খাট পুড়ে গেছে। কারও কারও ঘরে ছেলে–মেয়েদের পোড়া বইখাতা পড়ে আছে।
কলোনির বাসিন্দা সুমনা আক্তার নামের এক পোশাকশ্রমিক বলেন, শুক্রবার ছুটির দিন থাকায় বাসায় ছিলেন। হঠাৎ করে দেখেন বাড়ির মালিক সরোয়ার দর্জির বাসা থেকে আগুনের কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। আগুনের তীব্রতা দেখে সন্তানকে কোলে নিয়ে বাসা থেকে দ্রুত বের হয়ে যান। চোখের সামনে পুরো বাড়ি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
কারখানাশ্রমিক কবির হোসেন অগ্নিকাণ্ডের সময় কারখানায় ছিলেন। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ খবর পাই কলোনিতে আগুন লেগেছে। ছুটি নিয়ে ফিরে এসে দেখি ঘরে কিছু নগদ টাকা রেখেছিলাম সেগুলোও পুড়ে গেছে। মালপত্র কিছুই বের করতে পারিনি। সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’ কইতরি আক্তার নামের এক দিনমজুর বলেন, ‘আমি কাজে গিয়েছিলাম। সেখানে সংবাদ পাই আমাদের কলোনিতে আগুন লেগেছে। বাসায় এসে দেখি সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।’
পোশাক কারখানার শ্রমিক লতিফ মিয়া জানান, সারোয়ারের কলোনির একটি ঘরে রান্নার চুলা থেকে আগুন পুরো কলোনিতে ছড়িয়ে পড়ে। আগুন লাগার পর যে যার মতো ঘর থেকে কিছু মালামাল বের করতে পারলেও বেশিরভাগ পুড়ে গেছে।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ্ আল আরেফিন জানান, শুক্রবার দুপুর সোয়া একটার দিকে তাঁরা কলোনিতে আগুন লাগার খবর পান। কালিয়াকৈর ফায়ার সার্ভিস ও কোনাবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় বেলা ২টা ১৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয় ক্ষতির পরিমাণ এখন নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
কালোনিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে কালিয়াকৈর উপজেলা পরিষদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সেলিম আজাদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময়ে তিনি ব্যক্তিগত ও উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দেন।