বগুড়ায় জোড়া খুনের চার দিন পর মামলা, আসামি ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১৯ জন
বগুড়ার শাজাহানপুরের সাবরুল এলাকার সাগর হোসেন তালুকদার (৩৫) ওরফে ‘টোকাই সাগর’ ও তাঁর সহযোগী স্বপন (৩২) হত্যাকাণ্ডের চার দিন পর থানায় মামলা হয়েছে। শাজাহানপুর উপজেলার আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হযরত আলীসহ ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে আজ বৃহস্পতিবার মামলাটি করেছেন সাগর তালুকদারের বোন রোকসানা আকতার।
শাজাহানপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওয়াদুদ আলম মামলার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, জোড়া খুনের ঘটনায় ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।
গত রোববার সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে উপজেলার সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া এলাকায় এই জোড়া হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ‘সাগর বাহিনী’র প্রধান সাগর তালুকদার সাবরুল বাজার এলাকার গোলাম মোস্তফা তালুকদারের ছেলে এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুটি হত্যাসহ এক ডজন মামলা রয়েছে। তাঁর সহযোগী স্বপন সাবরুল তালুকদারপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে।
মামলার আসামিরা হলেন আশেকপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হযরত আলী (৪০), সাবরুল হাটখোলাপাড়ার ব্যবসায়ী পান্নু তালুকদার (৪৮), বাগিনাপাড়ার বাসিন্দা আবদুল জলিল (৩০), নগরপাড়ার রবিউল ইসলাম (৩২), নন্দকুল গ্রামের ছোট শাহীন (৩৮), সাবরুল আকন্দপাড়ার মো. মিজান (২৭), হাটখোলাপাড়ার মো. রেজা তালুকদার (৫০), তালুকদারপাড়ার রাফিদ তালুকদার (২৪), ফুলতলা মিনিপুকুর গ্রামের মো. মেহেদী হাসান (২৭), দাড়িকামারি গ্রামের মো. ফজলু (২৯), সাবরুল নগরপাড়ার মো. ইব্রাহিম (২৬), ফুলদীঘি এলাকার নায়েব আলী (৪৫), এরুইল গ্রামের মোকলেছার রহমান (৪০), কাহালু উপজেলার দেওড় গ্রামের সোহান (২৫), ছোট মণ্ডলপাড়ার মো. জনি (৩০), সাবরুল মণ্ডলপাড়ার মো. সাজু (৩২), সাবরুল বাগিনাপাড়ার মো. সাগর (২৫), মোস্তাফিজ (২১) ও শাকিল আহমেদ (২১)।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সাবরুল কারিগরপাড়ার মো. মোক্তারের (২৮) মোটরসাইকেলে দেশমা হোদ্দপুর গ্রামে পত্তন নেওয়া পুকুরে মাছের খাবার দেওয়ার জন্য যান সাগর তালুকদার। পথিমধ্যে সাবরুল হাটখোলাপাড়ার সাইফুল ইসলামের ছেলে স্বপন প্রামানিককেও (২৮) মোটরসাইকেলে তুলে নেন। বাড়ি ফেরার পথে সাবরুল ছোট মণ্ডলপাড়া গ্রামে ওত পেতে থাকা আসামিরা চাপাতি, চাকু, রামদা ও চায়নিজ কুড়াল নিয়ে পথরোধ করে তিনজনকে ঘিরে ধরেন। এ সময় আসামি পান্নু তালুকদারের হুকুমে অন্য আসামিরা সাগর তালুকদারসহ অপর দুজনকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে আহত করেন। মামলার প্রধান আসামি হযরত আলী (ইউপি চেয়ারম্যান) তাঁর হাতে থাকা ধারালো চাপাতি দিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে সাগর তালুকদারের মাথার বাঁ পার্শ্বে কোপ মেরে রক্তাক্ত জখম করেন। আবদুল জলিল (৩০) চায়নিজ কুড়াল দিয়ে সাগর তালুকদারের মাথার পেছনে উপর্যুপরি কোপ দেন। এ সময় তিনজন মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়লে আসামি রবিউল ইসলাম ধারালো চাকু দিয়ে সাগর তালুকদারের ঘাড়ের পেছনের অংশে কোপ মারেন। আসামি মিজান চায়নিজ কুড়াল দিয়ে একাধিকবার আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলে সাগর ও স্বপনের মৃত্যু হয়।
এর আগে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর সাবরুল বাজার থেকে মোটরসাইকেলে বগুড়া শহরে যাওয়ার পথে মাথাইলচাপড় এলাকায় কলেজশিক্ষক ও আওয়ামী লীগের নেতা শাহজালাল তালুকদার ওরফে পারভেজকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটে। কারাগারে থেকে এ হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে কলকাঠি নাড়ার অভিযোগে সাগর হোসেনের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা হয়। এ ছাড়া ২০২১ সালের ৩০ মে সাবরুল বাজারে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শিহাব উদ্দিনকে কুপিয়ে হত্যা মামলারও আসামি ছিলেন সাগর তালুকদার।