ডাকাত দলের হামলায় প্রাণ হারানো নৈশপ্রহরীর পরিবারে চলছে মাতম
নিজের জীবন বাজি রেখে বাজারের সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন নৈশপ্রহরী শহিদ উল্যাহ (৫০)। কিন্তু সেটি পারেননি তিনি। ডাকাতেরা তাঁকে হত্যা করে ২টি সোনার দোকান থেকে ২৫৭ ভরি সোনা, প্রায় সাড়ে ৩০০ ভরি রুপা এবং ৩ লাখ টাকা লুট করে নিয়েছে। শহিদ উল্যাহর পরিবারে এখন চলছে মাতম। স্বামীর মৃত্যুতে স্ত্রী সেতারা বেগম কখনো আহাজারি করছেন, কখনো জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাবাকে হারিয়ে শহিদ উল্যার দুই মেয়ে ও দুই ছেলের কান্না কোনো সান্ত্বনাতেই বাঁধ মানছে না।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত চারটার দিকে নোয়াখালীর কবিরহাট উপজেলার চাপরাশিরহাট পশ্চিম বাজারে ডাকাতির এ ঘটনা ঘটে। এ সময় ২৫-৩০ জনের একটি সশস্ত্র ডাকাত দল বাজারের নৈশপ্রহরী শহিদ উল্যাহর হাত ও মুখ বেঁধে লুটপাট চালায়। একপর্যায়ে ডাকাতদের হামলায় মাথায় আঘাত পান শহিদ উল্যাহ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় তাঁর। নিহত শহিদ উল্যাহ একই উপজেলার ধানশালিক ইউনিয়নের চর গুল্লাখালী গ্রামের বাসিন্দা।
শহিদ উল্যাহর চার সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া স্থানীয় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে, ছোট মেয়ে নূরে মাওয়া সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে। বড় ছেলে সাজেদুল ইসলাম স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে এবং ছোট ছেলে মুজাহিদুল ইসলাম স্থানীয় নুরানি মাদ্রাসার দ্বিতীয় জমায়েতে পড়ে।
থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে ডাকাতি ও হত্যা মামলা করা হয়েছে। শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
বড় মেয়ে জান্নাতুল মাওয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে, বাবাই ছিলেন তাদের সব। নৈশপ্রহরীর চাকরি করে সামান্য যে বেতন পেতেন, সেটি দিয়েই তাদের সংসার চলত। চলত চার ভাই-বোনের পড়ালেখা। বাবা মারা যাওয়ায় এখন তাদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। বাবাকে হারিয়ে তারা সবকিছুই হারিয়ে ফেলেছে। এখন তাদের খোঁজখবর নেওয়ার মতোও কেউ নেই।
প্রতিবেশী নূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, শহিদ উল্যাহর সহায়সম্পদ কিছুই নেই। তিনি স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শ্বশুরবাড়ির পাশে অন্য এক ব্যক্তির পরিত্যক্ত একটি ভাঙাচোরা ঘরে বসবাস করতেন। জীবিকার তাগিদে তিনি চাপরাশিরহাট বাজারে নৈশপ্রহরীর চাকরি করতেন। তাঁর মৃত্যুতে গোটা পরিবার চরম এক অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। সন্তানদের পড়ালেখাও বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
চাপরাশিরহাট বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ও চাপরাশিরহাট ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মহিউদ্দিন টিটু প্রথম আলোকে বলেন, শহিদ উল্যাহ সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে নিজের জীবন বাজি রেখে বাজারের সম্পদ রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। ডাকাতদের হাতে তাঁকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কেউ পূরণ করতে পারবে না। তবুও তাঁরা বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে বৈঠকে বসে যত দূর সম্ভব সহযোগিতার চেষ্টা করবেন।
কবিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ডাকাতির শিকার মা-মনি জুয়েলার্সের মালিক মিন্টু চন্দ্র নাথ বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার রাতে থানায় ডাকাতি ও হত্যা মামলা করেছেন। অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুর পর্যন্ত কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
ওসি রফিকুল জানান, খুনসহ ডাকাতির ঘটনাটি জেলা পুলিশ সুপার মো. শহীদুল ইসলামের নির্দেশনা মোতাবেক গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের একাধিক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে, যার মাধ্যমে শিগগিরই তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি আশা করছেন তাঁরা।