হত্যার পর শোবার ঘরে মাটিচাপা দেওয়া হয় লাশ, চার দিন পর উদ্ধার
কবিরাজের মাধ্যমে তাবিজ করে মেরে ফেলা হয়েছে ছেলেকে; ছেলের শোকে মারা গেছেন মা-ও। চার বছর আগের ওই ঘটনার ক্ষোভে এক দিনমজুরকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পরে মরদেহটি নিজের শোবার ঘরের মেঝেতে মাটিচাপা দিয়ে রেখেছিলেন অভিযুক্ত ব্যক্তি। এ ঘটনার পর ভাড়া নেওয়া ওই টিনের ঘরটিতে বসবাসও করেছেন তিনি। সম্প্রতি কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ ইউনিয়নের পিরোজপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে ওই ঘর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ ভেসে আসতে থাকে। পরে উৎস খুঁজতে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা দেখতে পান, ঘরের একটি গর্ত থেকে মানুষের হাত বেরিয়ে আছে। তাঁদের ধারণা, শিয়াল-কুকুর আঁচড়ানোয় মাটি সরে গিয়ে গর্ত থেকে অর্ধগলিত মরদেহের হাতটি বেরিয়ে আসে। খবর পেয়ে গতকাল বেলা ১১টার দিকে মাটিচাপা দেওয়া ওই অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। জড়িত সন্দেহে তাৎক্ষণিকভাবে তিনজনকে আটক করা হলেও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয় দুজনকে। অন্যজনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, অর্ধগলিত মরদেহটি নুরুল ইসলাম (৫২) নামের এক দিনমজুরের। তিনি হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার বরকান্দি গ্রামের প্রয়াত মকলিস মিয়ার ছেলে। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম নোয়াজ আলী (৫৫)। তিনিও বরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা। তবে দেবীদ্বার উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে থাকতেন কাজের সুবাদে। ওই ঘর ভাড়া নেওয়ার পর আশপাশের এলাকায় দিনমজুরের কাজ করতেন তিনি।
নোয়াজকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ জানায়, কাজ দেওয়ার কথা বলে ২২ সেপ্টেম্বর নুরুলকে ঘটনাস্থলে (দেবীদ্বার উপজেলার পিরোজপুর গ্রামে) ডেকে এনেছিলেন নোয়াজ। পরদিন (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ৩টায় ঘুমন্ত অবস্থায় নুরুলকে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি। পরে লাশ গুম করতে ঘরটির মাটির মেঝেতে চাপা দিয়ে রাখেন।
জাফরগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ইদ্রিস মিয়া বলেন, হত্যার ৪ দিন পর গতকাল সকালে ওই ঘর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। স্থানীয় লোকজন তখন নোয়াজকে খুঁজতে থাকেন। একপর্যায়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। আটকের পর হত্যার দায় স্বীকার করেছেন নোয়াজ।
জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় চার বছর আগে আর্থিক লেনদেন নিয়ে নুরুল ও নোয়াজের মধ্যে শত্রুতার সৃষ্টি হয়। ওই সময় নোয়াজের ছেলে শিমুল অসুস্থ হয়ে মারা যায়। নোয়াজ ধারণা করেন, কবিরাজের মাধ্যমে তাবিজ করে তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছেন নুরুল। ছেলে হারানোর শোকে কয়েক দিন পর নোয়াজের স্ত্রীরও মৃত্যু হয়। এসব ধারণা ও ক্ষোভের বশে ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় নুরুলকে গাছের গুঁড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেন তিনি।
দেবীদ্বার থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহিনুল ইসলাম বলেন, অর্ধগলিত মরদেহটি উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। গতকাল বিকেলেই নোয়াজকে কুমিল্লার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে তিনি হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছেন।