উপাচার্যের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করায় শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্য নিয়ে প্রতিবেদন করায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে কর্তৃপক্ষ। আজ বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দাবি, উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী বলছেন, তিনি উপাচার্যের বক্তব্য হুবহু উদ্ধৃত করে প্রকাশ করেছেন। তাঁর কাছে বক্তব্যের অডিও রেকর্ড ও তথ্যপ্রমাণ আছে।
এটা অপসাংবাদিকতা। আমি তো উদাহরণ হিসেবে থিউরি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে এভাবে তো বলিনি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।
মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তর প্রথম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তিনি ‘যায় যায় দিন’ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত। তাঁর বাড়ি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার আফজলনগর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন। ওই বক্তব্য উদ্ধৃত করে ‘যায়যায়দিন’ পত্রিকার অনলাইনে ‘দুর্নীতি হচ্ছে তাই বাংলাদেশের উন্নয়ন হচ্ছে: কুবি উপাচার্য’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন করেন ইকবাল মনোয়ার। ওই প্রতিবেদনে উপাচার্যকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘অনেকেই বলে দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উল্টো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন কথা বলতে পারে। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মাপাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মাপাড়ের গরিব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি কখনো কোনো বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গা থেকে যদি বলি, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাধা নয়।’
ওই প্রতিবেদনকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ তুলে ওই শিক্ষার্থী সাংবাদিককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলে আজ বুধবার দুপুরে ক্যাম্পাসে মানববন্ধন হয়। মানববন্ধনে উপাচার্যের বক্তব্য বিকৃত ও আংশিক উপস্থাপন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এ ঘটনায় সন্ধ্যায় এক অফিস আদেশে ওই শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
অফিস আদেশে বলা হয়, ‘গত ৩১ জুলাই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীনবরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈনের বক্তব্যকে বিকৃত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিভ্রান্তিমূলক মিথ্যা তথ্য প্রচার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করার পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রক্টরিয়াল বডির প্রাথমিক প্রতিবেদন ও সুপারিশে আজ ২ আগস্ট অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের সভায় অনুমোদিত হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ইংরেজি বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ ইকবাল মনোয়ারকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হলো।’
জানতে চাইলে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী ইকবাল মনোয়ার বলেন, ‘আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি। উপাচার্যের বক্তব্যের অডিও ও তথ্যপ্রমাণ আমার কাছে আছে। আমি ওনার বক্তব্য হুবহু লিখেছি। রাত আটটায় আমাকে রেজিস্ট্রার ভবনে ডাকা হয়। এরপর সই নিয়ে আমাকে অফিস আদেশ ধরিয়ে দেওয়া হয়। সাংবাদিকতার কারণে আমাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো।’
উপাচার্য এ এফ এম আবদুল মঈন প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা অপসাংবাদিকতা। আমি তো উদাহরণ হিসেবে থিউরি দিয়ে বক্তব্য দিয়েছি। সেখানে এভাবে তো বলিনি। আমার বক্তব্য খণ্ডিত করে প্রকাশ করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, এ ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির প্রধান সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন এন এম রবিউল আউয়াল চৌধুরী ও সদস্যসচিব ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।