লাঠিসোঁটা নিয়ে ব্যবসায়ীদের তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেল চাঁদাবাজেরা
রংপুর নগরের কেরামতিয়া মসজিদের খোলা মাঠের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ হয়ে গতকাল মঙ্গলবার রাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে চাঁদাবাজদের ধাওয়া দিয়ে সড়ক অবরোধ করেন। মধ্যরাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হলেও ব্যবসায়ীরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
আজ বুধবার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে জানা যায়, রংপুর নগরের মুন্সিপাড়ায় অবস্থিত কেরামতিয়া মসজিদ মাঠের এক অংশে দীর্ঘদিন থেকে কিছু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ব্যবসা করে আসছেন। সব কটি দোকান খোলা ছাউনি, উন্মুক্ত। বেঞ্চ পেতে দেওয়া। চা, বিস্কুট, ছোলা বুট, পেঁয়াজু, শিঙাড়া, সমুচা, জিলাপি বিক্রি করা হয়। রয়েছে শীতের নানা ধরনের পিঠা। দোকান রয়েছে ১৪টি। কেউ ৭ বছর, কেউ ১০ বছর, কেউবা ১৫ বছর ধরে এখানে ব্যবসা করে জীবন নির্বাহ করে আসছেন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা করে এলেও এবারই প্রথম চাঁদাবাজের উৎপাত বেড়ে গেছে। প্রতিবাদে গতকাল রাত আটটার দিকে জোটবদ্ধ হয়ে দোকানপাট বন্ধ রেখে লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করলে চাঁদাবাজেরা পালিয়ে যায়। একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা কেরামতিয়া মসজিদের চারমাথা মোড়ে অবস্থান নেন। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, প্রতিটি দোকান থেকে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। না দিলে দোকান ভেঙে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
মো. তুহিন সাত বছর থেকে এখানে খোলা মাঠে উন্মুক্ত চা-বিস্কুটের দোকান করে আসছেন। তাঁর কাছে প্রতিদিন ২০০ টাকা করে চাঁদা দাবি করা হয়। তিনি বলেন, ‘আমি বললাম, আমি যে ব্যবসা করি তোমাক কই থাকি ২০০ টাকা দেও। তখন বলে, “২০০ টাকা করি চাঁদা না দিলে দোকান ভাঙি দেমো। আজ (মঙ্গলবার) রাত আটটার ভিতরে (মধ্যে) টাকা না দিলে দোকান ভাঙি দেব, না হয় দোকানোত আগুন জ্বলে দেব।”’
চাঁদাবাজেরা কোনো রাজনীতি করে কি না, এমন প্রশ্নে তুহিন বলেন, ‘দলটল করে কি না, তা আমি জানি না। খবর পায়া পুলিশ আসছিল, পরে রাত সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী আসছিল।’
লাভলী বেগম ও তাঁর স্বামী মোস্তাফিজার রহমান দীর্ঘ ১২ বছর থেকে এখানে চা-পানের দোকান করে আসছেন। বিক্ষুব্ধ লাভলী বেগম বলেন, ‘এখানে কিছু গরিব মানুষ করি খায়। প্রতিটি দোকান থাকি আড়াই শ টাকা না দিলে দোকান ভাঙি দেওয়া হইবে। ওই মুহূর্তে রাস্তা ছাড়িয়া বাসায় চলি যাইতাম, তাহলে বাসায় হামলা করত।’ লিমন, শান্ত, রাকিব ও পিয়ালের নাম উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাঁরা চাঁদাবাজি করতে আসেন। তাঁরা কোন দল করেন তিনি জানেন না। তবে কেউ বলে তাঁরা বিএনপির লোক।
পিয়াল, শান্ত, লিমন, রাকিবের বাড়ি মুন্সিপাড়ায়। তাঁদের মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তবে এলাকার লোকজন জানান, তাঁরা কেউই রাজনীতি করেন না।
কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি জানার পরপরই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বিক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীদের শান্ত করা হয়। তাঁরা অভিযোগ দিলে মামলা নেওয়া হবে।
মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব মাহফুজ উন নবী বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা বিএনপি কিংবা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। এখন অনেক জায়গায় তাঁদের দলের নাম ব্যবহার করে সুনাম ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এসব বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে।