চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে টাঙানো হয়েছে ব্যানার

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে শিক্ষার্থীদের একাংশছবি: প্রথম আলো

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়ন ও সংগঠনটির সাবেক সভাপতি প্রত্যয় নাফাককে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন একদল শিক্ষার্থী। মঙ্গলবার দিবাগত রাতে এ ঘোষণা দিয়ে তাঁরা ক্যাম্পাসের জিরো পয়েন্টের মূল ফটক-সংলগ্ন কাটা পাহাড় রাস্তার এক পাশে ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

শিক্ষার্থীদের একাংশের দেওয়া এ ব্যানারে লেখা রয়েছে—‘ক্যাম্পাসে প্রত্যয় নাফাক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হলো’। ব্যানারটির নিচে ডান কোনায় লেখা রয়েছে—‘নো স্টুডেন্ট পলিটিকস ইন সিইউ’। বাঁ কোনায় লেখা আছে—‘সাধারণ শিক্ষার্থী, চবি’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একাধিক সূত্র জানায়, গত শনিবার রাতে ক্যাম্পাসের রেলস্টেশনে প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার আয়োজন করা হয়েছিল। এতে চাকমা ও ম্রো ভাষার দুটি চলচ্চিত্র, একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়। পাশাপাশি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক সংগঠন রঁদেভুর শিল্পীরা সেখানে গান পরিবেশন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আদিবাসী ও প্রগতিশীল’ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা হলেও তাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি, বর্তমান সভাপতি ও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটির কথা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের ফেসবুক পেজ থেকে প্রচারও করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রত্যয় নাফাক একটি কবিতা আবৃত্তি করেন। আবৃত্তির ভিডিটিও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের ফেসবুক পেজে প্রকাশ করা হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ভিত্তিক বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে সমালোচনা হয়।

শিক্ষার্থীদের এই অংশ বলছে, আদিবাসী ও প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এটি মূলত ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচি ছিল। তাঁরা ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি চান না। এমন সমালোচনার এক পর্যায়ে ছাত্র ইউনিয়নের ফেসবুক পেজ থেকে প্রত্যয় নাফাকের কবিতা আবৃত্তির ভিডিও সরিয়ে নেওয়া হয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছাত্র ইউনিয়নকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা ব্যানারটি গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে টাঙানো হয়। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী মো. মোতাহার ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের একই বর্ষের শিক্ষার্থী ফাহিম আহমেদকে দেখা গেছে। এই দুই শিক্ষার্থী সরাসরি কোনো ছাত্রসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে মো. মোতাহার ব্যানার টাঙানোর কথা স্বীকার করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে সব ধরনের ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই কর্মসূচি দিয়েছে। নিজেদের ব্যানারে না হলেও পরোক্ষভাবে এটি ছাত্র ইউনিয়নেরই কর্মসূচি ছিল। দলীয় পদবি আছে, এমন ব্যক্তি ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারবেন না। নতুন প্রশাসন না আসা পর্যন্ত এ অবস্থা চলবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুদীপ্ত চাকমা প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা সংগঠনকে নিয়ে এভাবে অপপ্রচার চালানোও রাজনীতির অংশ। ছাত্র ইউনিয়ন সব সময় ক্যাম্পাসে প্রগতিশীলতার চর্চা করেছে। ছাত্র ইউনিয়ন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, দখলদারি কিংবা অপকর্ম করেছে, এমন কোনো দৃষ্টান্ত নেই। ছাত্রদের অধিকার আদায় ও শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছাত্র ইউনিয়ন সব সময় কাজ করেছে। আমাদের বিরুদ্ধে কারও কোনো অভিযোগ থাকলে আমরা তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে চাই।’