নদী দখল-দূষণের গল্প উঠে এল ছবিতে

নদী ও এর পারের মানুষের জীবন নিয়ে প্রদর্শনী আয়োজন করে ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ। প্রদর্শনী দেখছেন অতিথিরা। আজ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমিতেছবি: জুয়েল শীল

শুকিয়ে গেছে নদীটি। একটা শিশু দৌড়ে বেড়াচ্ছে বিগতযৌবনা নদীটির আর্দ্র মাটির ওপর। সারিবদ্ধভাবে পাঁচ ব্যক্তি হেঁটে যাচ্ছেন। গভীরভাবে খেয়াল করলে বোঝা যায়, তাঁদের কারও কারও হাতে পানির পাত্র। এক আলোকচিত্রী ক্যামেরায় আবদ্ধ করেছেন দৃশ্যপটটি। নদীর প্রাণ-প্রকৃতি ও দূষণের গল্প নিয়ে সাজানো প্রদর্শনীতে ছবিটি স্থান পেয়েছে।

আজ শুক্রবার নগরের জেলা শিল্পকলা একাডেমির শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন গ্যালারিতে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। গ্যালারির এক কোনায় আলোকচিত্রী মো. সাহাত বিন সাঈদের তোলা ‘ড্রাই’ শিরোনামের ছবিটি জায়গা পেয়েছে। ছবি সম্পাদনায় ব্যবহৃত হয়েছে সাদা-কালো রং। ফলে নদীটি যেন বিষণ্নতা তৈরি করেছে।

শুধু এই ছবি নয়, ৯৬ আলোকচিত্রীর ক্যামেরায় ধরা পড়েছে দেশের বিভিন্ন নদী ও তার পাড়ের মানুষের জীবনযাত্রা। কোনো ছবিতে উঠে এসেছে দখল, কোনোটিতে আবার দূষণের চিত্র। গোধূলি বেলায় নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরার দৃশ্যও দর্শনার্থীদের হৃদয়ে আলোড়ন তুলেছে। দিনব্যাপী এ  প্রদর্শনী আয়োজন করেছে ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ। সহযোগিতায় ছিল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ফটোগ্রাফিক সোসাইটি ও নেদারল্যান্ডসের দূতাবাস।

ডেল্টা রিসার্চ ইনিশিয়েটিভের গবেষক মো. সাকিবুল হক প্রথম আলোকে বলেন, নদীর জীবন ও জীববৈচিত্র্য নিয়ে সচেতনতা তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য এই আয়োজন। প্রান্তিক নদীগুলো মানুষের সামনে নিয়ে আসার প্রচেষ্টাও রয়েছে।

নদী বাঁচলে বাঁচবে দেশ

‘বাংলাদেশ রিভার ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফি অ্যান্ড আর্ট এক্সিবিশন’ শীর্ষক এই আয়োজনে নদী নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। আলোচক ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও হালদা নদী–গবেষক মো. মনজুরুল কিবরীয়া, সাংবাদিক আলীউর রহমান ও চট্টগ্রাম ফটোগ্রাফিক সোসাইটির সভাপতি বাসব শীল।

এতে বক্তারা বলেন, দেশের নদীগুলো দখল ও দূষণে চিড়েচ্যাপটা হয়ে গেছে। খালগুলোও মৃতপ্রায়। চট্টগ্রামের দিকে তাকালে দখল-দূষণের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কর্ণফুলী ও হালদা নদীর নানা অংশ দখল হয়ে আছে। এসব দেখার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু কোনো সরকারই গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, একদল ক্ষমতাসীন দখল ও দূষণে জড়িত।

নদী বাঁচলে দেশও বাঁচবে—এমন মন্তব্য করে অধ্যাপক মো. মনজুরুল কিবরীয়া বলেন, কর্ণফুলী, হালদা, মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন অংশে তামাক চাষ করা হচ্ছে। এটি বন্ধ করতে হবে। শহরের সব বর্জ্য গিয়ে পড়ছে কর্ণফুলীতে। ফলে নদীর প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজারের (খননযন্ত্র) আঘাতে হালদার ডলফিন মারা পড়ছে। কিন্তু সরকারি সংস্থাগুলো নদী বাঁচাতে কার্যকরভাবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।