রাজবাড়ীতে অর্ধলক্ষ টাকায় বিক্রি হলো আরও দুটি বিপন্ন বাগাড়
রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে মহাবিপন্ন প্রজাতির দুটি বাগাড় মাছ অর্ধলক্ষ টাকার বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। এদের মধ্যে একটির ওজন ২৫ কেজি ও অন্যটির ছিল ১২ কেজি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দৌলতদিয়া ঘাট বাজারে এগুলো নিলামে তুলে বিক্রি করা হয়। বড়টি ৩৫ হাজার ও ছোটটি ১৬ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
সিরাজগঞ্জের জেলে ওসমান শেখ জানান, আজ সকালে সঙ্গীদের নিয়ে পদ্মা নদীতে জাল ফেলে দেবগ্রাম অন্তার মোড় এলাকায় বড় বাগাড় মাছটি পান। পরে বিক্রির জন্য দৌলতদিয়া ঘাট বাজারের দুলাল মণ্ডলের আড়তে নিয়ে আসেন। এ সময় নিলামে তোলা হয় মাছটি।
স্থানীয় মৎস্যজীবীরা জানান, কয়েক দিন ধরেই জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বাগাড় মাছ। এ ধরনের খবর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ায় অনেকেই দৌলতদিয়ার মাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বাগাড় কিনতে চান। বাজারটিতে না পাওয়া গেলেও অন্য জায়গা থেকে এ প্রজাতির মাছ কিনে এনে বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। আজ সকালে মানিকগঞ্জের আরিচা ঘাট বাজার থেকে ১২ কেজি ওজনের মাছ দৌলতদিয়ায় নিয়ে আসেন মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা। পরে সেই মাছও নিলামে তোলা হয়। মাছটি যমুনা নদী থেকে ধরা হয়েছিল।
দৌলতদিয়া ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ জানান, আজ সকালে ২৫ কেজি ওজনের বাগাড়টি নিলামে তুললে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মোট ৩৩ হাজার ৭৫০ টাকায় (১ হাজার ৩৫০ টাকা কেজি দরে) কিনে নেন তিনি। পরে দুপুরে গোয়ালন্দ মোড় এলাকার এক ব্যক্তি ১ হাজার ৪০০ টাকা দরে মোট ৩৫ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, মাছটির শিকার, ধরা বা বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকলেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার এবং প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত আছে।
অন্যদিকে ১২ কেজি ওজনের বাগাড়টি নিলামে উঠলে ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে মোট ১৫ হাজার ৬০০ টাকায় কিনে নেন মৎস্য ব্যবসায়ী চান্দু মোল্লা। তিনি জানান, এক ব্যক্তির কাছে প্রতি কেজিতে ১০০ টাকা লাভে মোট ১৬ হাজার ৮০০ টাকায় এটি বিক্রি করা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকা অনুযায়ী, বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, মাছটির শিকার, ধরা বা বিক্রি দণ্ডনীয় অপরাধ। আইন থাকলেও বাস্তবায়ন না থাকায় বাগাড় শিকার এবং প্রকাশ্যে বিক্রি অব্যাহত আছে। কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই ইলিশ, পাঙাশ, রুই, কাতলা মাছের সঙ্গে পদ্মা ও যমুনা নদীতে মহাবিপন্ন প্রাণীটি শিকার করছেন জেলেরা।
আইনগত জটিলতা থাকায় এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না বলে জানান গোয়ালন্দ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত রাজবাড়ী সদর উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজীব। তিনি বলেন, ‘বাগাড় মাছ বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইন-২০১২–এর আওতাভুক্ত হওয়ায় আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি না। মৎস্য সংরক্ষণ আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন মহলে উত্থাপন করা হচ্ছে। বন বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলা প্রশাসন চাইলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারেন।’