প্রতিটি ইউনিয়নে হচ্ছে মিনি স্টেডিয়াম, পার্ক 

দক্ষিণ সুরমার আটটি ইউনিয়ন, বালাগঞ্জের ছয়টি ও ফেঞ্চুগঞ্জের পাঁচটি ইউনিয়নে মিনি স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণ করা হবে।

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার বাদশাই টিলা এলাকার এই স্থানে মিনি স্টেডিয়াম নির্মিত হবে। গত বুধবার বিকেলেছবি: প্রথম আলো

সিলেট-৩ আসনের প্রতিটি ইউনিয়নে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি করে মিনি স্টেডিয়াম ও পার্ক। স্থানীয় সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমানের উদ্যোগে এবং সরকারি ও বেসরকারি অর্থায়নে এটি বাস্তবায়িত হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তরুণ প্রজন্মকে মুঠোফোনে আসক্তি এবং মাদক থেকে দূরে রাখতেই এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬টি ওয়ার্ড নিয়ে সিলেট-৩ আসন গঠিত। এর মধ্যে ৩ উপজেলায় ১৯টি ইউনিয়ন রয়েছে। এসব ইউনিয়নে ১৯টি করে মিনি স্টেডিয়াম ও পার্ক তৈরি করা হবে। একেকটি স্টেডিয়াম দেড় থেকে তিন একর জায়গাজুড়ে হচ্ছে। প্রতিটি পার্ক হবে ২০ শতক জায়গার মধ্যে। এর বাইরে প্রতিটি উপজেলায় আরও একটি করে মোট তিনটি শেখ রাসেল শিশুপার্ক নির্মিত হবে। সব কটি স্থাপনাই খাসজমিতে হচ্ছে। তবে দুটি স্থাপনার জায়গা স্থানীয় দুজন ব্যক্তি দান করেছেন। এসব স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণে খাসজমি যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল শনিবার তিন উপজেলায় চারটি স্টেডিয়াম ও পার্কের নির্মাণকাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হবে।

গত বুধবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমা উপজেলার লক্ষ্মীবাসা এলাকায় প্রায় ২০ শতক জায়গায় ভরাট করা আছে। সেখানে একদল শিশু-কিশোর ফুটবল খেলছে। এখানে নির্মিত হবে শেখ রাসেল শিশুপার্ক। একইভাবে বাদশাই টিলা এলাকায় নির্মীয়মাণ স্টেডিয়াম কাম পার্কের স্থানে গিয়ে কিশোর-যুবকদের ক্রিকেট খেলতে দেখা যায়। প্রায় দেড় একর জায়গাজুড়ে এ মাঠের অবস্থান। সেখানে ক্রিকেট খেলার ব্যস্ততার ফাঁকে কথা হয় সিলেট সরকারি কলেজের বিএ তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আহাদ শাহের সঙ্গে। আহাদ বলেন, এটি পুরোনো একটি মাঠ। এখানে অত্যাধুনিক স্টেডিয়াম নির্মিত হওয়ার খবরে এলাকাবাসী খুশি। স্থানীয় শিশু–কিশোর, যুবকদের খেলাধুলার পরিসর আরও বড় হওয়ার পথ উন্মুক্ত হলো।

সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মের অনেকে এখন ঘরবন্দী শৈশব-কৈশোর কাটায়। এতে প্রযুক্তির প্রতি অনেকে বেশি আসক্ত হয়ে পড়ছে। অনেকে মাদকাসক্তও হচ্ছে। এ ছাড়া ঘরে বসে কম্পিউটারে গেমস খেলার কারণে অনেকের সঠিক শারীরিক বিকাশও নিশ্চিত হচ্ছে না। এসব ভেবেই নির্বাচনের আগে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। সে কারণেই এসব স্থাপনা নির্মাণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

সংসদ সদস্য জানান, উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যালয় মিনি স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণ করবে। একেকটি স্টেডিয়াম নির্মাণে বাজেট ধরা হয়েছে এক কোটি টাকা। তাঁর পাঁচ বছর মেয়াদে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ (টিআর) এবং গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিটা-কাবিখা) কর্মসূচির আওতায় যে বরাদ্দ পাবেন, সেখান থেকে এখানে বরাদ্দ দেবেন। বাকি টাকা এলাকার বিভিন্ন প্রবাসী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরা দেবেন বলে কথা দিয়েছেন। পাঁচ বছরের মধ্যে এসব স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হলেও এক থেকে দুই বছরের মধ্যে বেশ কিছু স্টেডিয়ামের নির্মাণকাজ পুরোপুরি শেষ করে খেলার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে জানান সংসদ সদস্য।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান প্রথম আলোকে জানান, উপজেলা প্রশাসন এসব স্টেডিয়াম ও পার্ক নির্মাণের বিষয়টি তদারকি করছে। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঊর্মি রায় জানান, খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গাগুলো অনেক আগে থেকেই মাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সংসদ সদস্যের বরাদ্দে এসব মাঠকেই উন্নত করে মিনি স্টেডিয়াম ও পার্কে রূপ দেওয়া হচ্ছে।