ট্রাকচালকের মায়ায় বাঁচল বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়া মুখপোড়া হনুমান
বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রায় ৩৫ ফুট ওপর থেকে মাটিতে পড়েছিল একটি মুখপোড়া হনুমান। প্রাণ যায় যায় অবস্থা ছিল প্রাণীটির। এ সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে সড়কের পাশে হনুমানটিকে দেখেন ট্রাকচালক রিপন কুমার দেব (৩৩)। মায়া হয় তাঁর। কয়েকজন প্রতিবেশীকে ডাকেন। কিন্তু কামড়ের আশঙ্কায় সেটিকে ধরতে ভয় পাচ্ছিলেন তাঁরা। একসময় হনুমানটির মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে। তখন প্রাণীটির শরীরে মালিশের পাশাপাশি পানি দিতে থাকেন তাঁরা।
এর মধ্যে স্থানীয় একজন বন বিভাগের এক কর্মকর্তার মুঠোফোনে কল করেন। তিনি একটি ইনজেকশনের নাম দেন। সেটি সংগ্রহ করতে রিপন কুমার বাড়ি থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে ছুটে যান সিলেট নগরের মির্জাজাঙ্গাল এলাকায়। এরপর ইনজেকশন সংগ্রহ করে সেটি নিজেই হনুমানটিকে দেন। ইনজেকশন দেওয়ার পর হনুমানের শরীরে কিছুটা শক্তি ফিরে আসে। হাত-পা নাড়াতে শুরু করে প্রাণীটি।
রিপন কুমারের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলার বিমানবন্দরসংলগ্ন কাকুয়ারপাড় এলাকায়। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সোমবার সকালে প্রতিদিনের মতো তিনি ঘর থেকে কাজের জন্য বেরিয়েছিলেন। কাজে আর তিনি যেতে পারেননি। হনুমানটিকে সেবা করে সুস্থ করতে পুরো দিন চলে গেছে তাঁর। তিনি বলেন, আগে প্রায় সময় হনুমানগুলোকে এলাকায় দল বেঁধে চলাফেরা করতে দেখতেন। তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করত না। গতকাল সকালে হনুমানটি বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে কোনোভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়েছিল। এতে ওপর থেকে পড়ে বুকের বাঁ পাশ ও হাত–পায়ে ব্যথা পেয়েছিল। প্রথমে মনে করেছিলেন, প্রাণীটি তিনি বাঁচাতে পারবেন না। তবে শেষমেশ বাঁচানো গেছে।
রিপন কুমার বলেন, হনুমানটি কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর কলা ও দুধ খেতে দিয়েছেন। রাতে আরেকটি ইনজেকশন দিয়েছিলেন। পরে রাতে ঘরের ছাদে রেখে দিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকালে ছাদে ওঠার পর দেখেন, হনুমানটি তার দলের আরও চার-পাঁচটি হনুমানের সঙ্গে গাছে উঠেছে। এতে রিপনের মনে শান্তি কাজ করছে বলে তিনি জানান। হনুমানটিকে সুস্থ করতে এলাকার লিটন কুমার দেব, এমদাদুল হক, মানিক মিয়া সরকার, সৈয়দ আকির আলী, সাজিদুল হক ও সৃজন কুমার দেব নামের একদল যুবক কষ্ট করেছে বলে জানান রিপন।
সিলেটের পরিবেশবাদী সংগঠন ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, সোমবার রাতে খবর পেয়ে তিনি হনুমানটিকে দেখতে গিয়েছিলেন। সে সময় হনুমানটি অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছিল। ট্রাকচালক রিপন কুমারের মানবিকতায় তিনি অভিভূত হয়েছেন। হনুমানটিকে সুস্থ করতে তিনি দুই দিন নিজের কাজ বিসর্জন দিয়েছেন।