দুটি ডাল থাকতে থামল শতবর্ষী গাছ কাটা
তেঁতুলগাছটির বয়স কেউ বলছেন দুই শ, কেউ বলছেন তিন শ বছর। সরকারিভাবে গাছটি নিলামে বিক্রি করা হয়। ক্রেতা গাছটি কাটছিলেন। ওই পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তখন গাছটির দুটি মগডাল কাটা বাকি। ওই ডাল দুটি তাজা। তাতে অনেক তেঁতুল ধরে আছে। সংসদ সদস্য গাছটি কাটা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন এবং বিভাগীয় কমিশনারকে ফোন করে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বলেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহীর তানোর উপজেলার অমৃতপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে নিলাম কর্তৃপক্ষ বলছে, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যাতায়াত করতে না পারায় অর্ধমৃত গাছটি এলাকাবাসীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিলামে বিক্রি করা হয়।
গাছটি কাটার ব্যাপারে ক্রেতার কাছে তানোর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের একটি রসিদ পাওয়া যায়। রসিদে দেখা যায়, তানোর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত ১৮ জানুয়ারি এটি দিয়েছেন। ওই গাছটিসহ তিনটি গাছ মরা হিসেবে প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করা হয়। অপর গাছ দুটির একটি উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের চকরতিরাম মৌজার রেইনট্রি ও আজিজপুর মৌজার একটি তেঁতুলগাছ। তিনটি গাছকেই নিলাম করার সময় মরা হিসেবে উল্লেখ করা হয়। উপজেলার গুবিরপাড়া গ্রামের আফজাল হোসেন সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে গাছগুলো কিনেছেন। এ জন্য তিনি গাছের দাম ৩৫ হাজার ৯০০ টাকার সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট ৫ হাজার ৩৮৫ টাকা, ১০ শতাংশ আয়কর বাবদ ৩ হাজার ৫৯০ টাকাসহ মোট ৪৪ হাজার ৮৭৫ টাকা দিয়েছেন। নিলাম কর্তৃপক্ষ মূল্য বুঝে নিয়ে তাঁকে রসিদ দিয়েছে।
অমৃতপুরের তেঁতুলগাছটি কাটার সময় রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ গাছটি কাটা বন্ধের নির্দেশ দেন এবং ঘটনাস্থল থেকে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে ফোন করে তাজা গাছ কাটা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন।
সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটা জীবন্ত গাছ মরা দেখিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছিল।’ ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারে না বলে গাছটি নিলাম করা হয়েছে জানালে তিনি বলেন, সব মিথ্যা কথা। তিনি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসককে বলেছেন। তাঁরা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চেয়েছেন। দেখা যাক, তাঁরা কী ব্যবস্থা নেন। তবে পুকুর কাটার মতো রাতের বেলা গাছটি কেটে ফেলে কি না, সবার নজর রাখা দরকার। কারণ, একটি তেঁতুলগাছের দামই এক থেকে দেড় লাখ টাকা। সেখানে তিনটি গাছ নামমাত্র মূল্যে পরস্পরের যোগসাজশে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে।
স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানান, রাস্তার ওপরে গাছের যে ডালটি ছিল, সেটা কাটলেই গাড়ি চলাচলে সমস্যা হতো না। পুরো গাছটি না কাটলেও হতো।
জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবিদা সিফাত দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি তানোরে যোগদান করার আগেই স্থানীয় লোকজন গাছগুলো কাটার ব্যাপারে আবেদন করেছিলেন। অমৃতপুরের গাছের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে পারে না। তাই জনস্বার্থে গাছটি নিলামে বিক্রির জন্য এক বছর আগে থেকে প্রক্রিয়া চলছিল। সব প্রক্রিয়া শেষে নিলামে বিক্রি করা হয়।
রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, গাছটি সম্ভবত নিলামে দেওয়া হয়েছে। তিনি নথি চেয়েছেন। কাল দেখবেন।