দিনাজপুরে আত্মীয়ের বাসায় ছিলেন, পুলিশ আসার আগেই পালালেন ময়মনসিংহের সাবেক এমপি
স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন ময়মনসিংহ-৯ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আবেদীন খান (তুহিন)। খবর পেয়ে আজ বুধবার সকালে তিন ছাত্রনেতা ওই বাসায় যান। স্ত্রীসহ বাসার ড্রয়িংরুমে ছিলেন আনোয়ারুল আবেদীন। পরিচয় নিশ্চিত হয়ে পুলিশ সুপারকে জানান এক ছাত্রনেতা। তবে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই সাবেক সংসদ সদস্যকে পাননি। যদিও তখন বাসায় ছিলেন তাঁর স্ত্রী ও সন্তানেরা।
এ ঘটনা আজ সকালে দিনাজপুর শহরের বালুয়াডাঙ্গা এলাকায় (অন্ধহাফেজের মোড় থেকে ষষ্ঠীতলার মাঝামাঝি)।
ঘটনাস্থলে থাকা দিনাজপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা অন্তু খান বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আজ সকাল ৯টা ১০ মিনিটে আমরা তিন শিক্ষার্থী ওই বাড়িতে (বাড়ির মালিক প্রয়াত এম এ কুদ্দুস) প্রবেশ করি। তখন ড্রয়িংরুমে ছিলেন সংসদ সদস্য ও তাঁর স্ত্রী। কথা বলে ও ইন্টারনেট ঘেঁটে পরিচয় নিশ্চিত হয়ে সকাল ৯টা ২৩ মিনিট ও ৯টা ৩০ মিনিটে জেলা পুলিশ সুপার নাজমুল স্যারকে ফোন দিই। এরই মধ্যে স্থানীয় অনেক লোক এসে জড়ো হন। আমরা তাঁদের রোষানলে পড়েছিলাম। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সকাল ১০টা ২০ মিনিটে। পুলিশকে বাড়ির লোকেশন দেখিয়ে দিতে আমরা বাড়ির গেটের বাইরে বের হই। পরে পুলিশসহ বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করে আনোয়ারুল আবেদীনকে খুঁজে পায়নি পুলিশ।’
আনোয়ারুল আবেদীন খান নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের আহ্বায়ক ছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়ে হেরে যান। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়। এর পর থেকে তিনি আত্মগোপনে।
আনোয়ারুল আবেদীন খান নান্দাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের একাংশের আহ্বায়ক ছিলেন। আওয়ামী লীগ থেকে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। জুলাই অভ্যুত্থানের পরে তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়।
স্থানীয় কয়েকজন জানান, এতগুলো লোকের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালানো সহজ নয়। আনোয়ারুল আবেদীনকে পালাতে আশপাশের কয়েকজন লোক সহযোগিতা করেছেন। কোতোয়ালি থানা থেকে বালুয়াডাঙ্গার দূরত্ব সর্বোচ্চ ১ দশমিক ৩ কিলোমিটার। পুলিশও আসতে দেরি করল; এখানেও একটা প্রশ্ন থেকে যায়।
এ বিষয়ে দিনাজপুর পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করেছে পুলিশ। কিন্তু পরে তাঁকে (আনোয়ারুল আবেদীন) পাওয়া যায়নি। পুলিশ যখন ঘটনাস্থলে যায়, তখন অন্য লোকজনও ছিলেন। তাঁকে ছেড়ে দিতে কোনো দফারফা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কার সাথে?’ পুলিশের উপস্থিতির সময় জানতে চাইলে তিনি কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, “খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। সে সময় আমরা তুহিনকে (আনোয়ারুল আবেদীন) পাইনি। তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ‘দুই সন্তানসহ দিনাজপুরে দাদার বাড়িতে বেড়াতে এসেছি। আমার স্বামী আসেননি।’” পুলিশ অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আনোয়ারুল আবেদীনকে পালাতে সহযোগিতা করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘এ ধরনের কথা কেউ বলতেই পারেন। তবে তা সত্য নয়। তাঁকে ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।’