‘ইলিয়াস আলী ফিরবেন, আমরা আমৃত্যু তাঁর জন্য অপেক্ষা করব’

বিএনপির নিখোঁজ নেতা ইলিয়াস আলী

‘আমরা এখনো বিশ্বাস করি, ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন। আসলে তাঁকে গুম করে রাখা হয়েছে। মানুষের অন্তরে এখনো তিনি আছেন, থাকবেন। ইলিয়াস আলীর স্ত্রী-সন্তান, স্বজনসহ সিলেটের আপামর মানুষ এখনো তাঁর ফিরে আসার প্রতীক্ষায় আছেন। আমরা আমৃত্যু তাঁর জন্য অপেক্ষা করব।’

কথাগুলো বলছিলেন মো. ময়নুল হক। তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীর ব্যক্তিগত সচিবের দায়িত্বে ছিলেন ১৬ বছর। ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ১১ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ সোমবার। এর আগে গতকাল রোববার রাতে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে এসব কথা বলেন।

২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল ঢাকার বনানী থেকে গাড়িচালক আনসার আলীসহ ‘নিখোঁজ’ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, তাঁকে সরকার ‘গুম’ করে রেখেছে। ওই সময় ইলিয়াস আলীর সন্ধানের দাবিতে টানা এক সপ্তাহ হরতাল পালিত হয় তাঁর উপজেলা সিলেটের বিশ্বনাথে। হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ছাত্রদল ও যুবদলের তিন কর্মী নিহত হন। এ ছাড়া বিএনপি ও ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’ একই দাবিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে।

আরও পড়ুন

১১ বছর ধরে পরিবার থেকে শুরু করে বিএনপি নেতা-কর্মীরা ইলিয়াস আলীর ফেরার আশায় রয়েছেন। ময়নুল হকও তাঁদেরই একজন। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক। দীর্ঘ সময় ইলিয়াস আলীর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য পাওয়া ময়নুল বলেন, ‘তাঁর স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা স্বজন হারানোর বেদনায় সন্তানদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যও চেয়েছিলেন। আফসোস, শত আকুতি সত্ত্বেও ইলিয়াস আলীর সন্ধান সরকার এখনো দেয়নি।’

সিলেট বিএনপির একাধিক নেতা জানান, ২০১১ সালের মধ্যবর্তী সময় ভারতের টিপাইমুখে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বন্ধের দাবিতে সিলেটে জোরালো আন্দোলন দানা বাঁধে ইলিয়াস আলীর নেতৃত্বে। আঞ্চলিক ইস্যুতে সেই আন্দোলন অতীতে কমই দেখা গেছে।

ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়া নেতা-কর্মীদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেয় সিলেট জেলা বিএনপি। রোববার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, ১১ বছর আগে ‘নিখোঁজ’ হলেও এর পর থেকে সিলেটে সব ধরনের নির্বাচনসহ আন্দোলন-সংগ্রামে ইলিয়াস আলী আলোচনায় ছিলেন, আছেন। দলের নেতা-কর্মীরা স্থানীয়-জাতীয় নির্বাচনের আগে প্রচার-প্রচারণা এবং জেলা-উপজেলা সম্মেলনে ব্যানার-পোস্টারে ইলিয়াসের ছবি ব্যবহার করেন। এটা তাঁর প্রতি নেতা-কর্মীদের ভালোবাসা। সরকারই তাঁকে ‘গুম’ করে রেখেছে। তাঁরা দ্রুত প্রিয় এ নেতাকে অক্ষত ফেরত চান।

বিএনপির তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ হওয়ার পর দুবার সিলেট জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়। প্রতিবারই তাঁকে ১ নম্বর সদস্য রাখা হয়েছে। তাঁর নিখোঁজের বিষয়টি সাধারণ মানুষ এখনো সহানুভূতির চোখে দেখেন। এটি বিবেচনায় রেখেই দল ইলিয়াসকে মূল্যায়ন করে। এ ছাড়া প্রতিবছরই ইলিয়াস আলীর ‘নিখোঁজের’ দিনটিতে বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো তাঁকে ফিরে পাওয়ার দাবিতে কর্মসূচি পালন করে থাকে।

নিখোঁজ ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালককে অক্ষত অবস্থায় পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে গতকাল প্রতিবাদী যাত্রা, স্মারকলিপি প্রদান ও দোয়া মাহফিল কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট জেলা বিএনপি।

আরও পড়ুন

স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, সিলেট-২ (ওসমানীনগর ও বিশ্বনাথ) আসনে টানা তিনবার নির্বাচন করেছিলেন ইলিয়াস। এই নেতা বিজয়ী হয়েছিলেন দুবার। ২০০১ সালের আগে সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান ছিলেন সিলেট বিএনপির একক নেতা। এরপর ইলিয়াস আলীর উত্থান হলে দুই ধারায় সক্রিয় ছিল সিলেট বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনগুলো। পরে ২০০৯ সালের ৫ সেপ্টেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় সাইফুর রহমানের মৃত্যু হলে ইলিয়াস আলী সিলেট বিএনপির একক নেতায় পরিণত হন। পরে ইলিয়াস ‘নিখোঁজ’ হলে তাঁর অনুপস্থিতিকে দলীয় শক্তি হিসেবেই দল কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।

আরও পড়ুন

সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘গুম হওয়ার পর সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় খুঁজে বের করে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অথচ ১১ বছরেও তাঁর সন্ধান সরকার দিতে পারেনি। আমরা ইলিয়াস আলীর সন্ধান চাই।’

আরও পড়ুন