মাঠজুড়ে পাকা ধান ভুলিয়ে দিয়েছে বন্যার ক্ষতি

খেত থেকে আমন ধান কাটায় ব্যস্ত চাষি। গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার দক্ষিণ কালিয়াইশ এলাকায়প্রথম আলো

এ বছর চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় অতি বৃষ্টি ও বন্যার কারণে কৃষকের ফসলের ক্ষতি হয়েছিল। এ কারণে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমন ধানের আবাদও কম হয়েছে। তবে মাঠজুড়ে পাকা ধান দেখে সে কষ্টের কথা ভুলে গেছেন চাষিরা। চাষিরা বলছেন, এবার ধানের বাজারমূল্যও ভালো পাওয়া যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ১১ হাজার ৮৮৫ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। তবে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ৮২৫ হেক্টর জমিতে। অতি বৃষ্টি এবং জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে বৃষ্টির পানি জমে থাকার কারণে ৬০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়নি। গত বছর আমন ধানের উৎপাদন হয়েছিল ৫০ হাজার ৩৯৭ মেট্রিক টন। এ বছর আমনের আবাদ কমে যাওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৯ হাজার ১৯২ মেট্রিক টন।

উপজেলা কৃষি কার্যালয়ের কর্মকর্তা ও চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর জুলাইয়ের শুরু থেকে জমিতে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ শুরু হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে আমনের আবাদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতি বৃষ্টি এবং তৈরি করা জমিতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় বেশ কিছু জমির ধান নষ্ট হয়ে যায়। এ ছাড়া জমি থেকে দ্রুত পানি সরে না যাওয়ায় আমন মৌসুমে অনেক চাষি চারা রোপণ করতে পারেননি। এসব কারণে আমন ধানের আবাদ কম হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে উপজেলার দক্ষিণ কালিয়াইশ, চরপাড়া, খলিফাপাড়া, ছদাহা ও জনার কেঁওচিয়া এলাকা ঘুরে দেখা যায়, খেতজুড়ে ধানের ম–ম গন্ধ। কোনো খেতে চাষি ও শ্রমিকেরা ধান কাটছেন, আবার কোনো খেতে চাষি ও শ্রমিকেরা ধানের আঁটি বাঁধছেন। আবার কেউ কেউ আঁটি বহন করে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন।

উপজেলার চরপাড়া এলাকার চাষি আবু তালেব প্রথম আলোকে বলেন, ‘চার-পাঁচ বছর ধরে প্রায় দুই একর জমিতে আমন ধানের আবাদ করে আসছি। এ বছর অতি বৃষ্টির কারণে তৈরি করা জমি থেকে পানি সরে না যাওয়ায় অর্ধেক জমিতে চারা রোপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যতটুকু জমিতে আবাদ করেছিলাম, তাতে আমনের ভালো ফলন হয়েছে।’

এ বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে আমন ধানের আবাদ কম হলেও প্রতি হেক্টরে হাইব্রিড জাতের ৬ দশমিক ৩০ মেট্রিক টন ও উফশী জাতের ৪ দশমিক ২ মেট্রিক টন করে ফলন হয়েছে বলে জানান সাতকানিয়া উপজেলা উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা শম্ভু নাথ দেব। প্রতি মণ আমন ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২৮০ থেকে ১ হাজার ৩২০ টাকা পর্যন্ত।

সাতকানিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, টানা অতি বৃষ্টি ও কিছু নিচু জমিতে দীর্ঘ সময় ধরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির কারণে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আমনখেত নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি কিছু জমিতে আবাদ করা সম্ভব হয়নি। এতে উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আমনের আবাদ কিছুটা কম হয়েছে। তবে আবাদ কম হলেও ফলন হয়েছে যথেষ্ট ভালো। ইতিমধ্যে ৭০ ভাগ জমি থেকে আমন ধান কাটা শেষ হয়েছে। ভালো উৎপাদন ও ধানের বাজারমূল্য ভালো পাওয়ায় চাষিরা লাভবান হচ্ছেন।