ধর্ষণ শেষে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে হত্যা করা হয়, গ্রেপ্তার ৩ জনের স্বীকারোক্তি

ময়মনসিংহে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ধর্ষণ শেষে হত্যা করে মাটিচাপা চাপা দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার তিনজন
ছবি: সংগৃহীত

ময়মনসিংহ সদরে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে (৩০) হত্যারহস্য উদ্‌ঘাটন করেছে পুলিশ। মাজার থেকে নারীকে ডেকে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়। তিন সদস্যের দলটির এক তরুণ ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে পানিতে মাথা চেপে ধরে শ্বাসরোধে হত্যার পর লাশ মাটিচাপা দেন। গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার ওই তিন তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তাঁরা আজ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

আরও পড়ুন

মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে হত্যার ঘটনায় ১৫ জুন তাঁর মা অজ্ঞাতপরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ গতকাল ও আজ পৃথক অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। তাঁরা হলেন সদর উপজেলার চরনিলক্ষিয়া ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের মজিবুর রহমানের ছেলে মো. আল আমিন (২৫), সাথিয়াপাড়া গ্রামের গোলাম হোসেনের ছেলে রুহুল আমিন (২৬) ও সাইফুল ইসলামের ছেলে আবদুল্লাহ ওরফে জাকিরুল (১৯)।

নিহত মানসিক প্রতিবন্ধী ওই নারীকে এলাকার মানুষ সর্বশেষ দেখেছিলেন আবদুল্লাহর সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে তদন্তকালে তাঁকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর রুহুল আমিন ও আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে এলাকার মানুষ সর্বশেষ দেখেছিলেন আবদুল্লাহর সঙ্গে। সেই সূত্র ধরে তদন্তকালে তাঁকে প্রথমে গ্রেপ্তার করা হয়। তারপর রুহুল আমিন ও আল আমিনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনজনকেই ময়মনসিংহ সদর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, উজানপাড়া মাজার থেকে ওই নারীকে প্রথমে ডেকে নিয়ে যান আবদুল্লাহ। পথে যুক্ত হন রুহুল ও আল আমিন। মাজারের পাশে থাকা স্থানীয় রতন চেয়ারম্যানের পুকুরপাড়ে নিয়ে রুহুল আমিন ও আবদুল্লাহ ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। পরে বৃষ্টি আসায় আবদুল্লাহ ও রুহুল দুজনই নারীটিকে আল আমিনের সঙ্গে মাজারে রেখে চলে যান। পরে বৃষ্টি থামলে আল আমিন পুনরায় ওই নারীকে একই স্থানে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। কিন্তু আল আমিন টানাহেঁচড়া করে অনেক চেষ্টা করলেও ওই নারীকে ধর্ষণে ব্যর্থ হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে পুকুরের পানিতে মাথা চেপে ধরে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন। এরপর লাশ গুম করার জন্য পুকুরের মাঝে থাকা গর্তের ভেতর কাদামাটি চাপা দিয়ে চলে যান।

আরও পড়ুন

১৪ জুন দুপুরে চরনিলক্ষিয়া ইউনিয়নের সাথিয়াপাড়া এলাকায় পুকুরপাড়ে গর্তে অর্ধেক শরীর মাটিচাপা অবস্থায় ওই নারীর মরদেহ পাওয়া যায়। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় ওই নারী রাতবিরাতে একা চলাফেরা করতেন। এর আগে ১২ জুন দুপুরে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেননি। সেদিন রাতে ওই তিন আসামি তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যা শেষে মাটিচাপা দেন।

পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন বলেন, ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে আল আমিন শ্বাসরোধে হত্যা করেন ওই নারীকে। নারীটি মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় অনেকে সুযোগ বুঝে তাঁকে ধর্ষণ করতেন। আজ বিকেলে ময়মনসিংহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে পৃথক দুজন বিচারকের কাছে গ্রেপ্তার তিনি আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দিয়েছেন।