সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসনের বিকল্প নেই: প্রধান বিচারপতি
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, ‘একটি ন্যায়বিচার ও শোষণহীন সমাজব্যবস্থা গড়ে তুলতে এবং সমাজের সর্বত্র সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য আইনের শাসনের কোনো বিকল্প নেই। একজন বিচারপ্রার্থী ন্যায়বিচার পাওয়ার আশা নিয়ে প্রথমেই একজন আইনজীবীর দ্বারস্থ হন। পরম বিশ্বাসে বিজ্ঞ আইনজীবীর ওপর তাঁর স্বাধীনতা ও সম্ভ্রম রক্ষার ভার অর্পণ করেন। আমি বিশ্বাস করি, বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবীদের এ সম্পর্ক নির্ভরতার একটি পবিত্র আমানত।’
আজ রোববার দুপুরে ফরিদপুরে জেলা আইনজীবী সমিতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। প্রধান অতিথির ফরিদপুরে আগমন উপলক্ষে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাকক্ষে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘যে মহান আদর্শের ওপর ভিত্তি করে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে, যে প্রত্যাশায় আমাদের দেশের ছাত্র-জনতা জুলাই–আগস্ট মাসে গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে একটি কেতন দিয়েছে, যার লক্ষ্যও ছিল দেশের সর্বস্তরে সামাজিক সম্মান, ন্যায়বিচার ও আইনের শাসন নিশ্চিত করা।’
অনুষ্ঠানে প্রধান বিচারপতি জানান, ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিচারকদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতের লক্ষ্যে পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় গঠনের ঘোষণা দেন। সে লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
তরুণ আইনজীবীদের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনাদের স্মরণে রাখতে হবে, আপনারা মানুষকে আইনি সেবা প্রদানের জন্য এই মহান পেশায় এসেছেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করার মহান লক্ষ্য থেকে কখনোই বিচ্যুত হবেন না। জাগতিক লোভ–লালসা আপনাদের যেন পেশাগত নীতি নৈতিকতা থেকে সরাতে না পারে, সে বিষয়ে সব সময় সচেতন থাকবেন।’
সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, আইন শিক্ষা মানুষকে সহিষ্ণু হতে শেখায়, সম্মান করতে শেখায়। তাই আপনারা খেয়াল রাখবেন, আদালতে যেন এমন পরিস্থিতির উদ্বেগ না হয় যাতে বিচারপ্রার্থীদের আদালত সম্পর্কে দ্বিধাদ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বিচার বিভাগের সম্মান বজায় রাখার দায়িত্ব আমাদের সবার। বিচারক কিংবা আইনজীবী, আমাদের সবার লক্ষ্য কিন্তু এক ও অভিন্ন। মানুষকে ন্যায়বিচার দিতে সহায়তা করা। আমাদের সবার কর্মকাণ্ডে যেন সেটি প্রতিফলিত হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।’
সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আবদুল কাদের মিয়া। আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদ ব্যাপারীর সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন জেলা ও দায়রা জজ মো. জিয়া হায়দার, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল ইসলাম মোল্লা, পুলিশ সুপার মো. আবদুল জলিল, প্রবীণ আইনজীবী মো. শাহজাহান মিয়া, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা, জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ মোদাররেছ আলী, সাবেক পিপি ওলিয়ার রহমান প্রমুখ।
এর আগে আজ সকাল নয়টার দিকে প্রধান বিচারপতি আদালত ভবন চত্বরে বিচারপ্রার্থীদের বিশ্রামের জন্য ‘ন্যায়কুঞ্জ’ উদ্বোধন করেন। এরপর তিনি এজলাসগুলো পরিদর্শন করেন। প্রধান বিচারপতি গতকাল শনিবার ফরিদপুরে এসে পৌঁছান। বিকেলে পরে তিনি পল্লীকবি জসীম উদ্দীনের বাড়ি ও স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন।