হামলা চালিয়ে দুই হলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ছাত্রলীগের এক পক্ষের মানববন্ধন

প্রতিপক্ষের নেতাদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এক পক্ষের মানববন্ধন। এই পক্ষটির বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই হলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।রোববার দুপুরে বিশ্বদ্যিালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে
ছবি: প্রথম আলো

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে মাস্ক ও হেলমেট পরে হামলা চালিয়ে শের-ই-বাংলা হল ও বঙ্গবন্ধু হলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ছাত্রলীগের একটি পক্ষ আজ মানববন্ধন করেছে। বেলা একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় এই মানববন্ধনে বক্তারা শনিবার রাতের ঘটনার জন্য প্রতিপক্ষকে দায়ী করেন।

সমাবেশ আয়োজকদের দাবি, শনিবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই-বাংলা ও বঙ্গবন্ধু হলে ময়ীদুর রহমান ওরফে বাকি ও অমিত হাসান ওরফে রক্তিমের নেতৃত্বে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। হামলার ১০ ঘণ্টা পার হলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। বক্তারা এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, এভাবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

আরও পড়ুন

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তানজিদ মঞ্জু, গণিত বিভাগের মুবাশ্বির ওরফে রিদম, আতাউর রাফি, শরিফুল ইসলাম প্রমুখ। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে তাঁরা বলেন, হামলার পর ১০ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। হামলাকারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে কঠোর অবস্থান নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

শনিবার রাতে হামলায় আহত ছাত্রলীগের কর্মীরা বলছেন, মানববন্ধনের আয়োজকদের নেতৃত্বেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি হলে হামলা হয়েছে। এ সময় অন্তত ১০ জনকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে আহত করা হয়। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এ সময় তাঁদের একটি মোটরসাইকেলও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গতকাল রাতে যে পক্ষটি হামলা চালাতে হলে ঢুকেছিল, তারা বরিশাল সিটির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারী হিসেবে পরিচিত। দীর্ঘ সময় তারাই ক্যাম্পাসের হলগুলোর নিয়ন্ত্রণে ছিল। তবে বরিশাল সিটি নির্বাচনে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ জিতে যাওয়ায় তাঁরা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এ সময় হলগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেয় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকের সমর্থক হিসেবে পরিচিত পক্ষটি। ময়ীদুর রহমান ও অমিত হাসান জাহিদ ফারুকের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। নির্বাচনের দেড় মাসের মধ্যেই গতকাল রাতে মাস্ক-হেলমেট পরে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে আবার হল পুনরুদ্ধারে আসে সাদিকপন্থীরা।

শের-ই-বাংলা ও বঙ্গবন্ধু হলের অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, গতকাল রাত ১১টার দিকে ৪০ থেকে ৪৫ জন ছাত্রলীগ কর্মী মাস্ক ও হেলমেট পরে প্রথমে শের-ই-বাংলা হলে প্রবেশ করেন। তাঁরা হলে ঢুকে প্রধান ফটক আটকে দেন এবং বাইরে থেকে শিক্ষার্থীদের কক্ষগুলোর সিটকিনি লাগিয়ে দেন। এরপর হলের চতুর্থ ও পঞ্চম তলায় গিয়ে কয়েকটি কক্ষ তল্লাশি করেন তাঁরা।

পরে শের-ই-বাংলা হল থেকে বেরিয়ে সরাসরি বঙ্গবন্ধু হলের চতুর্থ তলায় যান ওই সব অস্ত্রধারীরা। সেখানে জাহিদ ফারুকপন্থী পক্ষটির কয়েক সমর্থককে পিটিয়ে আহত করেন তাঁরা। পরে অস্ত্রধারীরা দুটি হলেরই নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন। দুই হলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর তাঁরা আজ দুপুরে এই মানববন্ধন ও সমাবেশের আয়োজন করেন।

তবে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন ক্যাম্পাসে সাদিকপন্থী হিসেবে তাহমিদ জামান। এই পক্ষের আরেক নেতা তানজিদ মঞ্জু প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিপক্ষ ময়ীদুর রহমানের নেতৃত্বে আমার ওপর হামলা হয়। এতে আমি হাতে আঘাত পেয়েছি। ময়ীদুর রহমান পিকআপে ইট নিয়ে এসে আমাদের ওপর হামলা করে। আমরা হামলা করিনি।’

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও একাধিক পক্ষ ক্যাম্পাসে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এসব পক্ষ প্রায়ই সংঘাতে জড়াচ্ছে। চলতি বছরের শুরু থেকে গতকাল পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তত চারটি বড় ধরনের সংঘাত হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল রাতের ঘটনা ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। এ ঘটনার পর থেকে সাধারণ শিক্ষার্থী, বিশেষ করে আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

সার্বিক বিষয়ে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর খোরশেদ আলমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য পুলিশ সার্বক্ষণিক নজর রাখছে। এ ছাড়া এরই মধ্যে আমরা দুটি হলেই যারা বৈধ ছাত্র নয়, এমন ছাত্রদের অনতিবিলম্বে হল ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছি। এর পরেও যাঁরা হল ত্যাগ না করবেন পরবর্তীতে প্রশাসনের সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়ে আমরা সব সময় সতর্ক আছি।’