প্রশাসনশূন্য হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়, বেতন তুলতে পারছেন না শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসফাইল ছবি

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদত্যাগ করেছেন প্রায় এক মাস আগে। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, রেজিস্ট্রার, বিভিন্ন হলের প্রাধ্যক্ষসহ প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অনেকেই পদত্যাগ করেছেন। আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের ফিরে আসা এবং ক্লাস-পরীক্ষা চালু হলেও এক প্রকার অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। সর্বশেষ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ছাড় করাও সম্ভব হয়নি।

এমন অবস্থায় গত ২৯ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক চিঠিতে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলমান রাখা ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিল অথবা বিভাগীয় চেয়ারম্যানদের মধ্যে একজন জ্যেষ্ঠ অধ্যাপককে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক চিঠিতে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে চলমান পরিস্থিতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে উপাচার্য নিয়োগের দাবি জানান সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৮০ জন শিক্ষক, ২৩৮ জন কর্মকর্তা, নিরাপত্তাকর্মী ৭০ জন এবং কর্মচারী রয়েছেন ৪১৮ জন (মাস্টাররোলসহ)। এ ছাড়া অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগী রয়েছেন ৫২ জন।

কৃষি অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন হয় রেজিস্ট্রার ও অর্থ বিভাগের পরিচালকের স্বাক্ষরে। একদিকে রেজিস্ট্রার পদত্যাগ করেছেন, অন্যদিকে অর্থ বিভাগের পরিচালক মিজানুর রহমানও রাজনৈতিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারছেন না। ফলে আগস্ট মাসের বেতন–ভাতা উত্তোলন করতে পারেননি কেউ। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন বিভিন্ন পদে অবসরপ্রাপ্ত পেনশনভোগী ৫২ ব্যক্তি।

এমন অচলাবস্থার মধ্যে গত ১৮ আগস্ট একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে। নয়টি আবাসিক হলে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, হলগুলোতে কোনো প্রাধ্যক্ষ নেই। ডাইনিং চালু না হওয়ায় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের বাইরে গিয়ে খাওয়াদাওয়া করতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষার্থী স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন। রেজিস্ট্রার ও উপাচার্য না থাকায় সনদপত্র তুলতে পারছেন। এ ছাড়া প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা না থাকায় বিভিন্ন সময় ছোটখাটো সমস্যা নিরসনে সমস্যা পোহাতে হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ডেপুটি রেজিস্ট্রার খাদেমুল ইসলাম বলেন, একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক মাস উপাচার্য না থাকা কিংবা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা না থাকায় কাজে কিছুটা স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। প্রশাসনিক কাজে গতি ফিরিয়ে আনতে ও অচলাবস্থা নিরসনে উপাচার্য নিয়োগ জরুরি হয়ে পড়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজ্ঞান অনুষদের এক শিক্ষক বলেন, মন্ত্রণালয় এত দিন পরে একটি চিঠি ইস্যু করল। জ্যেষ্ঠ শিক্ষকদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে আছে। সে ক্ষেত্রে একজনের নাম সেখান থেকে প্রস্তাব করে পাঠালে বরং জটিলতা সৃষ্টি হতো না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক হাসান ফুয়াদ এলতাজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হলেন সর্বোচ্চ অভিভাবক। নতুন উপাচার্য নিয়োগ না হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থবির হয়ে পড়েছে। যদিও ক্লাস–পরীক্ষা শুরু করা গেছে। রুটিন দায়িত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে নিজেদের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে। হয়তো দুই–এক দিনের মধ্যে একজনের নাম প্রস্তাব করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সম্ভব হবে।