কার্টুনিস্ট এ কে এম ফিরোজের চিকিৎসা হচ্ছে না অর্থের অভাবে

কার্টুনিস্ট এ কে এম ফিরোজ পত্রিকায় প্রকাশিত তাঁর আঁকা কার্টুন দেখাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

নব্বইয়ের দশকের শুরু থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে দেশের শীর্ষস্থানীয় জাতীয় পত্রিকায় শিশুদের জন্য নিয়মিত সিরিজ কার্টুন এঁকেছেন ও গল্প লিখেছেন এ কে এম ফিরোজ (৬৪)। অনেকবার দেশে ও বিদেশে তাঁর যৌথ কার্টুন প্রদর্শনী হয়েছে। লিখেছেন ২০টির বেশি শিশুতোষ বই। এখন রাজশাহী নগরে থাকেন। সেখানে শিশুদের সুন্দর হাতের লেখা ও ছবি আঁকা শিখিয়ে কোনোমতে সংসার চালান তিনি। এরই মধ্যে তাঁর শরীরে বাসা বেঁধেছে কিছু জটিল রোগ। কিন্তু অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না।

রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকেন কার্টুনিস্ট এ কে এম ফিরোজ। তাঁর একমাত্র সন্তান সিয়াম ফিরোজ শহরের নিউ গভ. ডিগ্রি কলেজে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। ছেলের পড়াশোনার জন্যই প্রায় আট বছর আগে ঢাকা ছেড়ে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।

সম্প্রতি ফিরোজের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা গেল, বাসার একাংশে চেয়ার–টেবিল পাতা। সেখানে শিশুদের ছবি আঁকার ক্লাস হয়। পাশে আছে আরেকটি ক্লাসরুম। দুটি ক্লাসরুম মিলে মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা বাসাভাড়া গুনতে হয় তাঁকে। তাঁর আয়ের একমাত্র উৎস শিশুদের চিত্রাঙ্কন ও সুন্দর হাতের লেখা শেখানো। করোনার পর থেকে সেই আয়ও কমে এসেছে। আগের মতো আর শিক্ষার্থী পাওয়া যায় না বলে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

এ কে এম ফিরোজের উল্লেখযোগ্য কার্টুন সিরিজ ‘কেমন জব্দ’, ‘ভীমবাহাদুর’, ‘মাছি’, ‘গোবরা’ ইত্যাদি। শিশু-কিশোরদের কাছে এসব খুবই প্রিয় ছিল। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। বাঁধাই করা কার্টুনের বইগুলো বুকের কাছে নিয়ে ঘুমান। এমন দুরবস্থার মধ্যে শরীরের বাসা বেঁধেছে জটিল সব রোগব্যাধি। তাঁর পায়ুপথে চারটি ও পাকস্থলীতে দুটি টিউমারের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। তাঁর কিডনিতে সমস্যা দেখা দিয়েছে।

চিকিৎসক বলেছেন, এ কে এম ফিরোজের দ্রুত অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন। না হলে ক্যানসারের ঝুঁকি আছে। স্ত্রী শিউলি আরা ১০ বছর থেকে চোখের সমস্যায় ভুগছেন। আপনা–আপনি চোখের পাতা বন্ধ হয়ে যায়। এ জন্য এত দিন ভারতে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। দামি ইনজেকশন দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট হারিয়ে যাওয়ার পর ২০১৯ সাল থেকে স্ত্রীর চিকিৎসাও বন্ধ আছে।

কার্টুনিস্ট ফিরোজ ১৭ বছর গ্রামীণ ব্যাংকে কর্মরত ছিলেন। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির বইয়ের প্রচ্ছদ আঁকা, মনোগ্রাম তৈরি, অনুষ্ঠানের সাজসজ্জাসহ যাবতীয় শিল্পবিষয়ক কাজ তিনি করেছেন। ২০০০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরি থেকে অবসর নেন। এখন রাজশাহীতে আর্থিক সংকটের মধ্যে রোগব্যাধির সঙ্গে লড়াই করেছেন। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, তাঁর জরুরি অস্ত্রোপচারের জন্য এই মুহূর্তে অর্থের প্রয়োজন। সেটাও তাঁর পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এমন অর্থনৈতিক সংকটে ভক্ত কিংবা সরকারের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন কার্টুনিস্ট ফিরোজ ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।