নাটোরে আ.লীগের হামলা, পুলিশের মামলায় আসামি বিএনপির লোকজন

বিএনপির নেতা-কর্মীরা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জেলা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বলে পুলিশ দাবি করছে
ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের লালপুর উপজেলায় বিএনপির দলীয় কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা হামলা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার গৌরিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পর গতকাল মধ্যরাতে পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপির প্রায় ৩৫০ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা দেওয়া অভিযোগ এনে মামলা করেছে। পুলিশের দাবি, বিএনপির নেতা-কর্মীরা বিস্ফোরক বহন করছিলেন এবং ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে জেলা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন।

পুলিশের করা মামলায় আজ বুধবার সকাল পর্যন্ত বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুন অর রশিদের ছোট ভাই তুহিন ইসলাম (৪২) ও বিএনপির কর্মী মহিদুল ইসলাম (৫৮)। লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনোয়ারুজ্জামান বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। ওই মামলায় ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। তবে আসামিদের নাম প্রকাশ করেনি পুলিশ।

এদিকে বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার সময় উপজেলা যুবলীগের ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক কাইকোবাদ হোসেন (৪০) নেতা সাংবাদিককে সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় দৈনিক চলনবিলের খবর পত্রিকার লালপুর উপজেলা প্রতিনিধি আতিকুর রহমান বাদী হয়ে কাইকোবাদ হোসেনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা বিএনপি গতকাল বিকেলে শহর ছেড়ে গৌরিপুর গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল বের করে
ছবি: প্রথম আলো

উপজেলা বিএনপির নেতা–কর্মীদের ভাষ্য, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও দলীয় নেতা–কর্মীদের হত্যার প্রতিবাদে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে উপজেলা বিএনপি গতকাল বিকেলে শহর ছেড়ে গৌরিপুর গ্রামে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশের আয়োজন করে। কর্মসূচিকে ঘিরে গতকাল দুপুর থেকেই পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা সমাবেশ স্থলের আশপাশে অবস্থান নিতে শুরু করে। বিকেলের দিকে পালিদহ গ্রাম থেকে বিএনপির শতাধিক নেতা–কর্মী মিছিল নিয়ে গৌরিপুরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে লালপুর-ঈশ্বরদী সড়কে তাঁরা পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। এ সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা বাধা উপেক্ষা করে সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীরাও বিএনপির মিছিলে ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। এতে বিএনপির অন্তত ১২ কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপির নেতা–কর্মীরা অভিযোগ করছেন।

এ সময় দৈনিক চলনবিলের খবর পত্রিকার সাংবাদিক আতিকুর রহমান হামলার ঘটনাটি সরাসরি প্রচার করতে লাগলে যুবলীগ নেতা–কর্মীরা ওই সাংবাদিককে লাঞ্ছিত করেন এবং তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেন।

লালপুর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব হারুন অর রশিদ জানান, তাঁরা পুলিশের অনুমতি নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করছিলেন। হঠাৎ পুলিশের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা তাঁদের নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা করেন। এ সময় পুলিশও বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। অথচ এ ঘটনায় বিএনপির বিরুদ্ধেই পুলিশ মামলা করেছে।

অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বিএনপি কর্মসূচির নামে নিরীহ লোকজনকে হয়রানি করলে আমাদের তা প্রতিহত করার নৈতিক দায়িত্ব রয়েছে।’

মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে লালপুর থানার ওসি মনোয়ারুজ্জামান বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীরা কর্মসূচি চলাকালে নিরীহ লোকজনের ওপর হামলা করেছিলেন। তাঁদের শান্ত করতে কাঁদানে গ্যাসের দুটি শেল নিক্ষেপ করা হয়েছিল। তবে এতে কেউ আহত হননি। ওই সময় বিএনপির নেতা–কর্মীরা পেট্রলবোমা বা ককটেলজাতীয় বিস্ফোরক বহন করছিলেন। তাঁরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়ে পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করেছেন। তাই পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।