প্রথম দফায় নিয়ম মেনে সেন্ট মার্টিন ভ্রমণে গেলেন ৬৫৩ পর্যটক
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা জেটিঘাট থেকে প্রথম দফায় নিয়ম মেনে অনলাইনে নিবন্ধন করে আজ রোববার সকালে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণে গেছেন ৬৫৩ পর্যটক। বঙ্গোপসাগরের অন্তত ১২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এমভি বার আউলিয়া জাহাজটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপে বিকেল চারটায় পৌঁছার কথা।
গত ১ নভেম্বর থেকে টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন দ্বীপে নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারি সিদ্ধান্ত হলেও নানা জটিলতায় এত দিন পর্যটকেরা সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যেতে পারেননি। তবে আজ সকাল ৯টার দিকে কয়েক শ পর্যটক শহরের নুনিয়াছটা এলাকার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) জেটিঘাটে জড়ো হন। সেখানে জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, ট্যুরিজম বোর্ড ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে পর্যটকেরা অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ট্রাভেল পাস সংগ্রহ করেন। এরপর তাঁরা জাহাজে ওঠেন। সকাল ১০টায় ৬৫৩ পর্যটক নিয়ে এমভি বার আউলিয়া জাহাজটি সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
এর আগে সকালে নুনিয়াছটার জেটিঘাটে প্রথম দফায় সেন্ট মার্টিন যাওয়া পর্যটকবাহী জাহাজ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ্উদ্দিন। তিনি বলেন, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের বেঁধে দেওয়া নির্দেশনা মেনে পর্যটকেরা আগামী জানুয়ারি পর্যন্ত সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন। দৈনিক দুই হাজারের বেশি পর্যটক নেওয়া হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমভি বার আউলিয়া জাহাজের পরিচালক হোসাইনুল ইসলাম বাহাদুর প্রথম আলোকে বলেন, নানা জটিলতায় ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে জাহাজ চলাচল শুরু করা যায়নি। সরকারি নিয়মনীতি মেনে আজ ৬৫৩ পর্যটক সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাচ্ছেন। জাহাজটির ধারণক্ষমতা ৮৫০ জন। অর্ধেক পর্যটক সেন্ট মার্টিনে রাত যাপন করবেন। বাকি অর্ধেক পর্যটক নিয়ে জাহাজটি বিকেল পাঁচটার দিকে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা হবে। রাত ১১টার দিকে এমভি বার আউলিয়া কক্সবাজার শহরের বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে পৌঁছানোর কথা। তিনি আরও বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে পর্যটকবাহী তিনটি (কেয়ারী সিন্দাবাদ, এমভি বার আউলিয়া ও কর্ণফুলী এক্সপ্রেস) জাহাজ চালুর কথা ছিল। তবে যাত্রীর সংকটের কারণে এমভি বার আউলিয়া ছাড়া অপর দুটি জাহাজ সেন্ট মার্টিন যেতে পারেনি।
সকালে নুনিয়াছটা জেটিঘাটে কথা হয় ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকার ব্যবসায়ী ওবাইদুর রহমানের সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে আছেন পরিবারের চার সদস্য। ওবাইদুর রহমান বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ দেখার ইচ্ছা দীর্ঘদিনের। কক্সবাজার ভ্রমণে এসে সুযোগটি হাতছাড়া করেননি। দুই দিন থাকার পরিকল্পনা নিয়ে তাঁরা সেন্ট মার্টিন যাচ্ছেন।
ঢাকার আরমানিটোলার আরেক ব্যবসায়ী সাদিকুল ইসলাম বলেন, তিন বছর আগে তিনি একাই একবার সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণ করেছিলেন। দ্বীপের অপরূপ সৌন্দর্যের কথা শুনে পরিবারের সদস্যরা মুগ্ধ। পরে তাঁরাও সেন্ট মার্টিন দেখার আগ্রহ পুষে রাখেন। তাই এবার তাঁদের নিয়ে যাচ্ছেন। সেন্ট মার্টিনে দুই রাত থেকে তারপর ঢাকার ফেরার কথা আছে।
পর্যটকদের রাত যাপনের জন্য ২৩০টির বেশি হোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ আছে সেন্ট মার্টিনে। এসব পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে নির্মাণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএর জেটিতে জাহাজে ওঠার সিঁড়িতে পর্যটকদের হাতে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক আছে কি না, তা তদারকি করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এ সময় পর্যটকের হাতে থাকা মিনারেল ওয়াটারের বোতল, পলিথিন ও প্লাস্টিকের পণ্য রেখে দেওয়া হয়। পর্যটকদের সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারি বিধিনিষেধ সম্পর্কে ধারণা দেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মীরা।
কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক জমির উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পর্যটকেরা যাতে জাহাজে পলিথিন ও প্লাস্টিকের পণ্য ব্যবহার করতে না পারেন, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। পলিথিন ব্যাগের পরিবর্তে পর্যটকদের বিনা মূল্যে পাটের ব্যাগ দেওয়া হয়েছে। জাহাজে যাতে কোনোভাবে পলিথিন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার করতে না পারেন, সে বিষয়ে কঠোর থাকবে পরিবেশ অধিদপ্তর।
গত ২৮ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আসমা শাহীন স্বাক্ষরিত এক স্মারকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে অনিয়ন্ত্রিত পর্যটন ও সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিকের দূষণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের পাঁচটি সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়। ডিসেম্বর ও জানুয়ারি এই দুই মাস প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিনে রাত যাপনের সুযোগ পাবেন এবং সৈকতে রাতের বেলায় আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি ও বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না বলেও নির্দেশনায় উল্লেখ করা হয়।
গত ১৯ নভেম্বর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবরীনা রহমান স্বাক্ষরিত এক আদেশে সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণে যাওয়া পর্যটক ও অনুমোদিত জাহাজ নিয়ন্ত্রণে যৌথ কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই আদেশে বলা হয়, সেন্ট মার্টিনে যেতে হলে পর্যটকদের নিবন্ধনসহ নানা বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মন্ত্রণালয়ের গঠন করা যৌথ কমিটি এসব বিষয় দেখভাল করবে। কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নীলুফা ইয়াসমিন চৌধুরীকে। তিনি বলেন, বিধিনিষেধ মেনেই আজ প্রথম দফায় একটি জাহাজে ৬৫৩ পর্যটক সেন্ট মার্টিন গেছেন।