এই শীতে ঘুরে আসুন মায়াবিনী হ্রদ

মায়াবিনী হ্রদে আছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থাছবি: প্রথম আলো

চারদিকে ঘন জঙ্গলে ঘেরা। মাঝখানে শান্ত জলরাশির হ্রদ। হ্রদের মাঝখানে ছোট ছোট দ্বীপ। দ্বীপগুলোর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করেছে বাঁশের সাঁকো। নিরিবিলি পরিবেশে পাখিদের কলকাকলি ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। নৈসর্গিক এই সৌন্দর্য যেকোনো ভ্রমণপ্রেমী মানুষকে মুহূর্তে মায়ার জালে আটকে ফেলবে।

খাগড়াছড়ি শহরের চেঙ্গী স্কয়ার থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে মায়াবিনী লেক (হ্রদ)। জেলার পানছড়ি উপজেলার লতিবান ইউনিয়নের কংচাইরি পাড়া এলাকায় পাহাড়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্রটি। বিশাল বাগানে ঘেরা হ্রদ দেখে মুগ্ধ হয়ে যাবে যে কেউ। দুই পাহাড়ের মাঝখানে বাঁধ দিয়ে কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে হ্রদটি।

একতা মৎস্য সমবায় সমিতির উদ্যোগ এই হ্রদ তৈরি করা হয়েছে। সমিতির ২৮ সদস্যের হাত ধরেই এখানে তৈরি হয়েছে এই বিনোদন কেন্দ্র। স্থানীয় লোকজন কমিউনিটি ট্যুরিজমের মাধ্যমে মায়াবিনী হ্রদ পরিচালনা করে থাকেন। বন্ধুরা মিলে বেড়াতে যেতে পারেন আবার পারিবারিক ভ্রমণের জন্যও চমৎকার পর্যটন স্পটটি। চাইলে একা একা চুপচাপ নির্জনে বসে সময়ও কাটাতে পারবেন। হ্রদে ঝাঁকে ঝাঁকে দেখা মিলবে সাদা বক আর হাঁসের দলের।

২০১৭ সালের ৭ নভেম্বর পর্যটকদের জন্য এটি খুলে দেওয়া হয়। প্রতিদিন শত শত পর্যটকের ভিড় জমে। কেউ আসেন প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করতে। কেউ আসেন পিকনিক করতে। বিশাল লেকে ঘুরতে পারবেন নৌকা, পঙ্খীরাজ নৌকা, স্পিডবোটে করে। আছে কায়াকিংয়ের ব্যবস্থাও। মায়াবিনী হ্রদে প্রবেশ করতে ফি লাগে ৩০ টাকা। আর ৫০ টাকা দিয়ে কায়াকিং করা যায় আধা ঘণ্টা।

হ্রদের মাঝখানেও রয়েছে বেশ কয়েকটি টিলা। টিলাগুলোতে তৈরি করা হয়েছে ৪টি গোলঘর ও ১টি বিশ্রামাগার। হ্রদজুড়ে নানা জায়গায় টাঙানো হয়েছে দোলনা। বাচ্চাদের জন্য আছে কিডস জোন। আছে বাগানবিলাস, গাঁদা, জবা, গন্ধরাজসহ নানা ধরনের ফুলের বাগান। নানান জাতের পাখির ডাক শুনতে শুনতে প্রশস্ত লেকের স্বচ্ছ পানিতে নৌকায় বসে প্রকৃতি উপভোগ করতে পারেন সব বয়সী মানুষ।

নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াতে পারে হ্রদে
ছবি: প্রথম আলো

মায়াবিনী হ্রদের ব্যবস্থাপক অংহ্লাপ্রু মারমা বলেন, ‘এখানে নির্দিষ্ট ফি দিয়ে পিকনিক করা যায়। তা ছাড়া কেউ পছন্দমতো খাবার অর্ডার করলে আমরা খাবার রান্না করে দিয়ে থাকি। তবে রান্নার বিষয়টা এক দিন আগে বলে দিতে হয়। আমরা পর্যটকদের কথা চিন্তা করে লেকে মাছ ধরার জন্য ব্যবস্থা রেখেছি। যেকোনো পর্যটক বড়শি দিয়ে মাছ ধরে সেটা কিনতে পারেন। চাইলে আমরা মাছ রান্নাও করেও দিই।’

কীভাবে যাবেন

খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বর থেকে পানছড়ি উপজেলা সড়ক হয়ে অটোরিকশা, টমটম অথবা মাহিন্দ্রা যোগে যেতে হবে সদর উপজেলার ভাইবোনছড়া বাজারে। বাজার থেকে পশ্চিম দিকে পাঁচ মিনিটের পথ কংচাইরী পাড়ার মায়াবিনী হ্রদ। গাড়ি ভাড়া করে নিতে চাইলে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা নেবে। মোটরসাইকেল ভাড়া ১০০ টাকা। কেউ স্থানীয় পরিবহনে যেতে চাইলে পানছড়ি রুটের সিএনজিচালিত অটোরিকশায় উঠে ৮০ টাকা ভাড়া দিয়ে ভাইবোনছড়া বাজারে নেমে ১০ টাকা টমটম ভাড়া দিয়ে মায়াবিনী হ্রদে যেতে পারবেন। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত যেকোনো সময় গাড়ি পাওয়া যায়।

মায়াবিনী হ্রদ যেমন পরিচ্ছন্ন, তেমনি মনোরম পরিবেশ। নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তার কোনো কারণ নেই। মায়াবিনী হ্রদে গেলে এক ফাঁকে দেখে আসতে পারেন কাছাকাছি পানছড়ি রাবার ড্যাম, বৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় অরণ্য কুটির আর পেঁয়াজু পয়েন্ট।

কোথায় থাকবেন

মায়াবিনী হ্রদের আশপাশে থাকার কোনো ব্যবস্থা নেই। তবে কেউ থাকতে চাইলে হ্রদের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে ক্যাম্প করতে পারেন। এ ছাড়া খাগড়াছড়ি শহরে থাকার মতো বিভিন্ন মানের হোটেল রয়েছে। নিজেদের সুবিধামতো যেকোনো হোটেলের কক্ষ ভাড়া নিয়ে থাকতে পারবেন।