২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

উন্নত নয় সৌদিতে গিয়ে পেলেন মানবেতর জীবন, ফিরলেন পঙ্গু হয়ে

সৌদিতে গিয়ে স্ট্রোক করে মহাসিনের বাঁ পাশ অচল হয়ে যায়। বর্তমানে স্ত্রী–সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি
ছবি: প্রথম আলো

অভাবের সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ধারদেনা করে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মহাসিন আলী (৩২)। কিন্তু সৌদিতে গিয়ে তিনি কোনো কাজ পাননি। যে সংস্থার মাধ্যমে সৌদিতে গিয়েছিলেন, তাঁরা ঠিকমতো খাবার দিতেন না। অনাহারে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। একসময় স্ট্রোক করে শরীরের বাঁ পাশ অচল হয়ে যায় মহাসিনের। পরে প্রবাসীদের সহযোগিতায় দেশে ফিরে আসেন তিনি।

বর্তমানে অর্থাভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না মহাসিন আলী। যে প্রতিষ্ঠান তাঁকে স্বপ্ন দেখিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে গিয়েছিল, তারাও খোঁজখবর নেন না। স্ত্রী ও শিশুসন্তান নিয়ে বর্তমানে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) লোকজন ঋণের কিস্তি নিতে বারবার তাঁর বাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন। এ অবস্থায় কাজের কথা বলে বিদেশে নিয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানের বিচার দাবি করেছেন তিনি।

শূন্য হাতে দেশে ফিরে বিপাকে পড়েছেন মহাসিন। অর্থের অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্ত্রী ও তিন মাসের কন্যাকে নিয়ে খাবারের কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। বন্ধুদের সহযোগিতায় আপাতত চলছেন।

মহাসিনের বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রামে। মহাসিন আলী জানান, দরিদ্র পরিবারে জন্ম হওয়ায় ঠিকমতো পড়ালেখা করতে পারেননি। এসএসসি পাস করে বেকার ঘুরছিলেন। একপর্যায়ে ২০২২ সালের ৩ জানুয়ারি বিয়ে করেন। বিয়ের পর একটি সংস্থার মাধ্যমে ২০২২ সালের ২ জুন সৌদি আরবে যান। এতে তাঁর সাড়ে চার লাখ টাকা খরচ হয়। যার মধ্যে সাড়ে তিন লাখ টাকা এনজিও থেকে ঋণ নেওয়া। বাকি টাকা ২ শতাংশ জমি বিক্রি করে জোগাড় করেছেন।

মহাসিন আলী প্রথম আলোকে বলেন, সৌদিতে যাওয়ার পর প্রথমে তাঁকে জেদ্দায় তিন দিন অপেক্ষা করানো হয়। সেখানে তাঁকে খাবার দেওয়া হতো। এরপর কাজের কথা বলে রিয়াদে পাঠানো হয়। সেখানে যাঁর কাছে তুলে দেন, তিনি কোনো কাজ না দিয়ে তাঁকে বসিয়ে রাখেন। সেখানে খেয়ে না–খেয়ে তিন মাস ছিলেন। সারাক্ষণ শুয়ে-বসে দিন কাটান। এ অবস্থায় বাঁচার জন্য অন্য একজনের সহযোগিতায় মরুভূমিতে আলুখেতে কাজ করতে যান। সেখানে চার মাসের বেশি সময় থাকলেও কাজ করেছেন মাসে তিন থেকে চার দিন। বাকি দিনগুলো বসে কাটিয়েছেন। এ অবস্থায় খাওয়ার কষ্টে একসময় অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন
ভাগ্য ফেরাতে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে গিয়েছিলেন মহাসিন। পঙ্গু হয়ে হুইল চেয়ারে করে দেশে ফেরেন তিনি
ছবি: সংগৃহীত

মহাসিন আরও বলেন, ২০২৩ সালের ২৭ জানুয়ারি রাতে তিনি স্ট্রোক করেন। এতে তাঁর শরীরের বাঁ পাশ অচল হয়ে পড়ে। সঙ্গে কোনো মানুষ বা অর্থ না থাকায় চিকিৎসাও করাতে পারেননি। অসুস্থ অবস্থায় পড়ে ছিলেন কয়েক দিন। সেখান থেকে কয়েকজন ব্যক্তি তাঁকে একটি ট্যাক্সিতে তুলে মক্কায় পাঠিয়ে দেন। সেখানে একটি সেতুর নিচে ১১ দিন কাটানোর পর পুলিশ তাঁকে আটক করে কাগজপত্র দেখতে চান। সবকিছু দেখানোর পর বাংলাদেশে ফিরে যেতে বলেন। কিন্তু টিকিট কেনার টাকা না থাকায় তাঁকে আরেকটি গাড়িতে তুলে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাঠিয়ে দেন। সেখানে দূতাবাসের বাইরে খোলা আকাশের নিচে তিন দিন পড়ে ছিলেন। পরে দূতাবাসে প্রয়োজনে আসা দুই ব্যক্তি টিকিটের ব্যবস্থা করে চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরে আসেন।

আরও পড়ুন

শূন্য হাতে দেশে ফিরে বিপাকে পড়েছেন মহাসিন। অর্থের অভাবে নিজের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস (২০) ও তিন মাসের কন্যাকে নিয়ে খাবারের কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। নিজে কোনো কাজ করতে পারেন না। মাঠে চাষযোগ্য কোনো জমিও নেই। বাবার রেখে যাওয়া টিনশেডের সেমিপাকা ঘরে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে থাকছেন। বন্ধুদের সহযোগিতায় আপাতত চলছেন। তবে এভাবে কত দিন চলবেন সেই দুশ্চিন্তায় আছেন।

মহাসিন বলেন, নিজের চিকিৎসার প্রয়োজন। চিকিৎসক বলেছেন, চিকিৎসা করাতে পারলে ভালো হওয়া সম্ভব। টাকার জন্য চিকিৎসা হচ্ছে না। এনজিওগুলো সপ্তাহ হলেই বাড়িতে আসছে। টাকার জন্য নানা কথা শোনাচ্ছে। এক এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে আরেক এনজিওকে দিচ্ছেন। এভাবে ঋণের বোঝা বাড়ছে।

জেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. আবদুল লতিফ শেখ বলেন, সমাজসেবা থেকে চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়। এ ছাড়া অসহায় মানুষের জন্য নানা সহযোগিতা করা হয়। ওই যুবক আবেদন করলে বিষয়টি তাঁরা ভেবে দেখবেন।