সোনারগাঁয়ে পুলিশের মারধরে ব্যবসায়ী মৃত্যুর অভিযোগ, ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে পুলিশের মারধরে নুরুল ইসলাম (৫৫) নামের এক পোলট্রি ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় উপজেলার জামপুর ইউনিয়নের বুরুমদী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তবে পুলিশের দাবি, ওই ব্যক্তি মাদক ব্যবসায়ী। আগে থেকেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। বাড়িতে পুলিশ দেখে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
নিহত নুরুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত ফালু মিয়ার ছেলে। তাঁর পাঁচ মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে। তাঁর মেয়ে শিলা আক্তার ও মিথিলা আক্তার জানান, তিন বছর আগে ওপেন হার্ট সার্জারি হওয়ার পর তাঁদের বাবা বাড়িতেই থাকতেন। বাড়িতেই পোলট্রি মুরগির ব্যবসা করতেন। গতকাল দুপুরেও তিনি বাড়িতে ছিলেন। এ সময় তালতলা পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) ইলিয়াস আহমেদ একজন পুলিশ কনস্টেবলসহ সাদাপোশাকে তাঁদের বাড়িতে আসেন। একপর্যায়ে হাতকড়া পরিয়ে নুরুল ইসলামকে ঘর থেকে বের করার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় পুলিশের সঙ্গে তাঁদের বাবার ধস্তাধস্তি হয়। পুলিশ নুরুল ইসলামকে কিল, ঘুষি ও লাঠি দিয়ে মারধর করে। এ সময় পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দিতে ১ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করে। পরিবারের সদস্যরা ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন।
মিথিলা বলেন, ‘টাকা না পেলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় বাবাকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখায় পুলিশ। আমরা ৫০ হাজার টাকা দিই তাদের। তারপরও পুলিশ বাবাকে নিয়ে যেতে চায়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে বাবা ইনহেলার ও পানি চান। পুলিশ ইনহেলার ও পানি দিতে দেয়নি। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে তারা বাবাকে ঘরে রেখে চলে যায়। আমরা তখন বাবার কাছে গিয়ে দেখি, তিনি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। পরে তাঁকে উদ্ধার করে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন।’
টাকা না পেলে চলমান রাজনৈতিক মামলায় নুরুল ইসলামকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর ভয় দেখায় পুলিশ।
এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, মৃত্যুর পর ওই এএসআই ও কনস্টেবল আবারও ওই বাড়িতে আসেন। এ সময় এলাকাবাসী ও নিহতের স্বজনেরা মিলে ওই দুই পুলিশ সদস্যকে একটি কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন ও সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুব আলম ঘটনাস্থলে গিয়ে সন্ধ্যা সাতটায় দুই পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করেন।
পুলিশের একটি সূত্র ও নিহতের একজন স্বজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে প্রথম আলোকে জানান, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। রাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান ও সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে নিহতের পরিবার মামলা ও ময়নাতদন্ত ছাড়া নিহতের লাশ দাফন করতে রাজি হয়। পরে রাতেই ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন হয়।
সোনারগাঁ থানার ওসি মাহবুব আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পুলিশ মাদক উদ্ধারের জন্য ওই বাড়িতে অভিযানে যায়। সেখানে কোনো মাদক না পেয়ে তারা চলে আসে। পরে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়।’
ময়নাতদন্তে ছাড়া লাশ দাফনের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘আমরা ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে পাঠাতে চেয়েছি। কিন্তু নিহতের স্বজনেরা তাতে রাজি হননি। ওই ব্যক্তির মৃত্যু নিয়ে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় তাঁদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাশ বিনা ময়নাতদন্তে দাফনের জন্য দেওয়া হয়।’
নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (খ অঞ্চল) শেখ বিল্লাল হোসেন বলেন, পুলিশি নির্যাতনে মৃত্যু ঘটনা সত্য নয়। মাদকবিরোধী অভিযানে মাদক না পেয়ে পুলিশ চলে আসার পর ওই ব্যক্তি মারা যান। পরে তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে পুলিশ পুনরায় ওই বাড়িতে যায়। এ সময় বাড়ির লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পুলিশের ঘুষ নেওয়া, মারধর করা ও পরে দুই পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা অস্বীকার করেন তিনি।