অবশেষে বৈধভাবে হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ শাফিন। বাড়ি সাতক্ষীরা জেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের চার বছরেও তিনি হলে থাকার সুযোগ পাননি। ছাত্রলীগের দখলদারি আর প্রশাসনের উদাসীনতায় তাঁকে বাড়তি টাকা খরচ করে থাকতে হয়েছে ভাড়া বাসায়। এখন আর সেই দিন নেই। দীর্ঘ অপেক্ষার পর হলে আসন পেয়েছেন তিনি।
আজ শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলের সামনে গিয়ে কথা হয় শাফিনের সঙ্গে। তিনি ও তাঁর তিন সহপাঠীও ওই হলে আসন পেয়েছেন। একসঙ্গে থাকার পরিকল্পনা নিয়েও কাগজপত্রসহ হল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে এসেছিলেন তিনি।
উচ্ছ্বাস নিয়ে মোহাম্মদ শাফিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘অবশেষে তিনি হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর যেন কোনো রাজনৈতিক সংগঠন এভাবে হল দখল না করতে পারে, এটিই তাঁর চাওয়া। হল বরাদ্দের এই প্রক্রিয়া যেন সব সময় বজায় থাকে।’
অবশ্য শুধু মোহাম্মদ শাফিন আহমেদ নন, তাঁর মতো অন্তত এক শ শিক্ষার্থীর ভিড় দেখা যায় শহীদ আবদুর রব হলের ফটকের সামনে। তাঁরা সবাই ফলাফলের ভিত্তিতে আসন পেয়েছেন। একই অবস্থা ছিল ছাত্রদের বাকি ছয় হলেও। তবে ছাত্রীদের হলে ভিড় ছিল তুলনামূলক কম। হল কর্তৃপক্ষও বরাদ্দ পাওয়া নতুন শিক্ষার্থীদের চকলেট দিয়ে বরণ করে নিচ্ছিলেন।
জানতে চাইলে ওই হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘হলে উঠতে পেরে শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাসিত। তাঁদের এই আনন্দ দেখে নিজেদের অনেক সুখী মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যে দুই শোর বেশি ছাত্র হলে উঠেছেন। বাকিরাও ধীরে ধীরে উঠছে।’
দীর্ঘ সাত বছর পর গত শুক্রবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের আবাসিক হলে আসন বরাদ্দ দেয় কর্তৃপক্ষ। ফলাফল যাচাই বাছাই করে আসন বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে হলে উঠতে পারবেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে হল চালু রয়েছে ১২টি। এর মধ্যে ছাত্রদের সাতটি আর ছাত্রীদের পাঁচটি। ছাত্রদের হলে নিয়ম মেনে সর্বশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল ২০১৭ সালের জুনে। এরপর থেকে আর বরাদ্দ বন্ধ ছিল। শাখা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এককভাবে এসব নিয়ন্ত্রণ করতেন। কোন হলে কে থাকবে এটিও তাঁরা ঠিক করতেন। তবে ছাত্রীদের হলে নিয়মিত বরাদ্দ দেওয়া হতো। সাময়িক অনুমতি নিয়ে ছাত্রীরা হলে থাকার সুযোগ পেতেন।
প্রশাসনের এই বরাদ্দ প্রক্রিয়া নিয়েও শিক্ষার্থীদের একটি অংশের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরা বলছেন, শুধু ফলাফলের ভিত্তিতে বরাদ্দ দেওয়ায় আর্থিকভাবে অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের শিক্ষার্থীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আবার অনেক বিভাগের গড় ফল কম হয়।
এসব নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখালেখির পরে সংবাদ সম্মেলন করে কর্তৃপক্ষ। আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্যের (প্রশাসন) কার্যালয়ে এই সম্মেলন হয়। এ সম্মেলনে আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক সাইদুর রহমান চৌধুরী ও প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ উপস্থিত ছিলেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিয়ে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) ও কেন্দ্রীয় হলের আসন বরাদ্দ কমিটির প্রধান অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিন বলেন, হল বরাদ্দের নীতিমালার আলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন এই নীতিমালা পরিপূর্ণ নয়। কিন্তু সীমিত এই সময়ের মধ্যে নতুন নীতিমালা করে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো সম্ভব ছিল না। তাঁরা এখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ নিচ্ছেন। পরবর্তী সময়ে এই নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ বলেন, ‘হলে কেউ মাদকদ্রব্য সেবনের সুযোগ পাবে না৷ এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে মাদক নিয়ে আসার সব চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছে। এটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন কাজ করছে।