প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা
পটুয়াখালী-৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের সংসদ সদস্য এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মহিববুর রহমানকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কটূক্তির অভিযোগে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতাসহ তিনজনকে বিবাদী করে সাইবার নিরাপত্তা আইনে একটি নালিশি মামলা করা হয়েছে।
বুধবার দুপুরে মো. মহিবুল্লাহ পাটোয়ারী নামে প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কর্মচারী পরিচয় দেওয়া এক ব্যক্তি বাদী হয়ে বরিশাল সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালতে মামলার আবেদন করেন। আদালত আবেদনটি গ্রহণ করে পটুয়াখালীর মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) অভিযোগ তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মামলায় প্রতিমন্ত্রীকে ১ নম্বর সাক্ষী করা হয়েছে।
আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাজমুল হাসান মামলার বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ট্রাইব্যুনালের বিচারক গোলাম ফারুক মামলায় আনা অভিযোগ তদন্ত করে মহিপুর থানার ওসিকে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলায় কলাপাড়ার মহিপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আরিফ বিল্লাহ ওরফে নাসিমকে এক নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। এ ছাড়া মহিপুরের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা রনি হোসেনকে ২ নম্বর এবং যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আল সাইফুল ইসলাম ওরফে সোহাগকে ৩ নম্বর বিবাদী করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে যুবলীগ নেতা শামীম আল সাইফুল গত উপজেলা নির্বাচনে কলাপাড়ায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করে হেরে গেছেন।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করা হয়, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যুবলীগ নেতা শামীম আল সাইফুল ইসলামের নির্দেশে একটি ভিডিও আপলোড করেছেন বিবাদীদের দুজন। সেখানে অনুমতি ছাড়া ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ ও ব্যবহার করে তাঁকে হেয়প্রতিপন্ন ও সম্মান ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া তাঁর ছবি ও পরিচিতি ব্যবহার করে বিবাদীরা ফেসবুকে তথ্য প্রচারের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটানোসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে ঘৃণা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার অপচেষ্টা করেছেন। এতে প্রতিমন্ত্রীর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করা হয়েছে দাবি করে বিবাদীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আরজি জানানো হয়।
মামলার ১ নম্বর বিবাদী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফ বিল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি মামলার বিষয়ে কিছু জানি না। গত ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর রাজনীতি ও এলাকা থেকে দূরে আছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি একসময় সাবেক পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী মাহবুব হোসেন তালুকদারের রাজনীতি করতাম। এরপর রাজনীতিতে নেই। এখন এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলেই আমাকে দায়ী করা হয়। এতে ভীষণ অসহায় লাগে। রাজনীতি করে যদি এভাবে হেনস্তার শিকার হতে হয়, তাহলে কী আর বলব। আমিও চাই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত হোক।’
এদিকে এ ঘটনায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী থানায় পৃথক দুটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। কলাপড়া থানা সূত্র জানায়, কলাপাড়া পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দিদার উদ্দীন আহমেদ গতকাল থানায় জিডিটি করেন। এ বিষয়ে জানতে কলাপাড়া থানার ওসি আলী আহমেদের মুঠোফোন নম্বরে কল করলে তিনি এই প্রতিবেদকের পরিচয় জানার পর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে একাধিকবার কল করলেও আর ধরেননি।
অন্যদিকে রাঙ্গাবালী থানায় আজ অন্য জিডিটি করেন রাঙ্গাবালী সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য রাকিবুল হাসান ফেরদৌস। রাঙ্গাবালী থানার ওসি মো. হেলাল উদ্দীনকে ফোন করলে তিনিও ধরেননি। খুদে বার্তা পাঠালে তিনি একটি সভায় আছেন বলে জানান।
কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালী থানায় করা জিডির কপি প্রথম আলোর হাতে এসেছে। দুটি জিডিতেই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে রাষ্ট্র ও প্রতিমন্ত্রীর সুনাম ক্ষুণ্নের অভিযোগ করা হয়েছে। দুটি জিডির অভিযোগ অভিন্ন।
দুটি জিডিতে মহিপুর থানা ছাত্রলীগের সাবেক জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আরিফ বিল্লাহ ওরফে নাসিম এবং মহিপুরের বাসিন্দা ও যুবলীগ নেতা রনি হোসেনের নাম উল্লেখ করে আরও অজ্ঞাত পরিচয় ৪-৫ জনের কথা বলা হয়েছে।