এক বেগুনের ওজনই এক কেজি

কৃষক আবু জাফরের খেত থেকে বেগুন তুলে ঝুড়িতে রাখছেন এক শ্রমিক। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া এলাকায়প্রথম আলো

খেতে ফলন এসেছে বেগুনের। নিজের খেত থেকে বেগুন তুলছিলেন কৃষক আবু জাফর। কয়েকটি বেগুনেই ভরে যাচ্ছিল একটি ঝুড়ি। কারণ, একেকটি বেগুনের ওজন ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি। বেগুনের আকার এত বড় হবে কল্পনাও করতে পারেননি আবু জাফর। ইউটিউব দেখেই এই জাতের বেগুন চাষ করেছিলেন। প্রথমবারেই বাজিমাত করলেন।

বড় আকারের এই বেগুনের নাম ‘বারি বেগুন ১২’ হলেও এলাকার লোকজন একে ‘লাউ বেগুন’ নাম দিয়েছে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের আবু জাফরের খেতের লাউ বেগুন দেখে অবাক স্থানীয় কৃষকেরাও।

গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বাঁশবাড়িয়ায় আবু জাফরের খেতে গিয়ে দেখা গেল, বেগুন তুলতে ব্যস্ত তিনি। বললেন, ইউটিউব দেখেই তাঁর এ বেগুন চাষের ইচ্ছা হয়। সীতাকুণ্ডের মাটিতে হবে কি না, সে নিয়েও সংশয় ছিল। কিন্তু আশঙ্কা মিথ্যা প্রমাণ করে বেগুনের ভালো ফলন হয়েছে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ বলছে, আবু জাফরই প্রথম কৃষক, ‍যিনি ঝুঁকি নিয়ে সীতাকুণ্ডে বারি বেগুন ১২ চাষ করেছেন। যদিও বীজ সরবরাহ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।

সরেজমিন দেখা যায়, আবু জাফরের খেতের একেকটি বেগুনগাছ তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট লম্বা। প্রতিটি গাছ বলিষ্ঠ। একেকটিতে পাঁচ থেকে সাতটি বেগুন ঝুলে থাকতে দেখা গেছে। একেকটি বেগুন দেখতে অনেকটা লাউয়ের মতো। ছয়জন শ্রমিক বেগুন তোলার কাজ করছেন।

আবু জাফর প্রথম আলোকে বলেন, গত জুন মাসে একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখছিলেন। স্ক্রল করতে করতে হঠাৎ একটি বেগুনের ভিডিও চোখে পড়ে। পুরো ভিডিও মনযোগ দিয়ে দেখেন তিনি। উপস্থাপকের কথা শুনে তাঁর মনে হয়েছে, তিনিও এ বেগুন চাষ করতে পারবেন। পরে তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল মুনছুরকে ভিডিওটি দেখান এবং তাঁকে কিছু বীজ সংগ্রহ করে দিতে অনুরোধ করেন। পরে একদিন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানানো হয়, তাঁর জন্য ১০০ গ্রাম বারি বেগুন ১২–এর বীজ সংগ্রহ করা হয়েছে।

বেগুন খেতে কৃষক আবু জাফর। গতকাল দুপুরে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া ইউনিয়নের চৌধুরীপাড়া এলাকায়
প্রথম আলো

আবু জাফর বলেন, ওই বীজ এনে সেপ্টেম্বরের শুরুতে তিনি একটি বীজতলায় চারা উৎপাদন করেন। পরে তিনি ৮০ শতক জমিতে সেই চারা লাগান। ৮০ থেকে ৯০ দিনের মাথায় ফলন আসতে শুরু করে। বীজতলা থেকে ফসল তোলা শুরু করা পর্যন্ত তাঁর ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখন পর্যন্ত তিনি তিনবারে এক টন বেগুন তুলেছেন। এতে তাঁর খরচ উঠে গেছে। গতকালও তিনি ৮০০ কেজি বেগুন তুলেছেন।

তিনি আরও বলেন, এটি শীতকালীন ফসল। শীত যত বাড়বে, উৎপাদন তত বাড়বে। এখনো শীত পুরোপুরি শুরু হয়নি। গাছে প্রচুর ফুল আছে। আরও নতুন ফুল আসছে।

আবু জাফর বলেন, শুরুতে বাজারে এ বেগুন নিয়ে বিপাকে পড়েন তিনি। ক্রেতারা জানতে চেয়েছেন, জিনিসটি আসলে কী? বেগুন বলার পর অনেক ক্রেতা বিশ্বাস করছিলেন না। ক্রেতাদের চিরচেনা বেগুনের মতো লাগছিল না। বেগুনের নাম জিজ্ঞেস করার পর তিনি জানান, বারি বেগুন ১২। এ নামও কখনো শোনেননি ক্রেতারা। ক্রেতারাই এর নাম দিয়েছে লাউ বেগুন। প্রতি কেজি লাউ বেগুন ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। বেগুন তোলার দিনে ছয়জন শ্রমিক নেন তিনি। প্রতিজন শ্রমিককে ৭০০ টাকা বেতন দিতে হয়।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, আবু জাফরের জন্য তিনি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ১০০ গ্রাম বীজ আনিয়েছেন। অন্য অনেক জাতের চেয়ে এই বেগুনগাছে রোগবালাইও কম। সেচ দিতেও হয় কম। ফলন ভালো, গুণাগুণও বেশি। লাভও বেশি।

তিনি আরও বলেন, এ বেগুন স্বাদেও অতুলনীয়। বিচি খুবই কম। এর ভর্তা যেমন সুস্বাদু, তেমনি ভাজাসহ অন্য তরকারিতেও স্বাদ বেশ ভালো। এ বেগুন হাইব্রিড জাতের নয়। এটি দেশীয় জাতের বেগুন হওয়ায় বীজ সংরক্ষণ করা যায়। সীতাকুণ্ডে চাষের জন্য উপযোগী।