মানিকগঞ্জে ট্রাকচালক ও সহকারী হত্যা মামলায় চার আসামির মৃত্যুদণ্ড, পাঁচজনের যাবজ্জীবন
মানিকগঞ্জে ট্রাকের এক চালক ও তাঁর সহকারী হত্যা মামলায় চার আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া আরও পাঁচ আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৩০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অর্থদণ্ড অনাদায়ে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আরও এক বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আজ সোমবার দুপুরে অতিরিক্ত দায়রা জজ-১ আদালতের বিচারক সাবিনা ইয়াসমিন এই রায় ঘোষণা করেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার বড়াকৈর গ্রামের বদর উদ্দিন, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের মো. ইসলাম ওরফে কালু, একই গ্রামের ইয়াকুব আলী শেখ ও গাজীপুরের জয়দেবপুর উপজেলার হারবাইদ গ্রামের বিল্লাল শিকদার। রায় ঘোষণার সময় তাঁরা আদালতে অনুপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন মানিকগঞ্জের দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি গ্রামের বাবু মিয়া, ভোলার লালমোহন উপজেলার কলমা গ্রামের শাহ আলম, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার আলোকদিয়া গ্রামের বাবুল শেখ, একই গ্রামের আখের আলী এবং সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলার মধুপুর গ্রামের শাহাদাৎ হোসেন। তাঁদের মধ্যে আসামি আখের আলী আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
হত্যার শিকার ট্রাকচালক মো. জয়নাল (৪০) সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার তুলসিডাঙ্গা গ্রামের আবু জাফরের ছেলে এবং তাঁর সহকারী রুবেল মিয়া ওরফে রাসেল (২৮) ঢাকার কুর্মিটোলা বিহারি ক্যাম্পের মৃত বাচ্চু মিয়ার ছেলে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালের ৫ আগস্ট সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর থেকে পাথর বোঝাই করে ট্রাকচালক জয়নাল ও তাঁর সহকারী রুবেল গাজীপুরের শ্রীপুরে একটি সিরামিক কারখানায় যাচ্ছিলেন। যথাসময়ে ট্রাকটি গন্তব্যে না পৌঁছানোয় চালক জয়নালের মুঠোফোনে কল করে তা বন্ধ পান স্বজনেরা। পরের দিন রাত ১০টার দিকে ঢাকার ধামরাইয়ের শ্রীরামপুর এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাশে পাথরবোঝাই ট্রাকটি পাওয়া যায়। কিন্তু চালক ও সহকারীর খোঁজ মিলছিল না।
ওই বছরের ৭ আগস্ট সকালে মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতপরিচয়ের দুই ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই দিন দুপুরে একটি স্যাটেলাইট চ্যানেলে লাশ দুটি দেখে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে গিয়ে স্বজনেরা ট্রাকচালক জয়নাল ও সহকারী রুবেলের পরিচয় শনাক্ত করেন। ওই দিনই নিহত জয়নালের ছোট ভাই হারুন-অর–রশীদ বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয়ের কয়েকজনকে আসামি করে ঘিওর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।
আদালত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই হত্যা মামলা প্রথমে ঘিওর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক এবং পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই আবদুস সালাম মামলাটি তদন্ত করেন। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ২০১১ সালের ৩০ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আবদুস সালাম ৯ আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন।
এরপর আসামিরা বিভিন্ন সময় আদালত থেকে জামিন নিয়ে আত্মগোপনে চলে যান।
রাষ্ট্রপক্ষে (বাদী) মামলাটি পরিচালনা করেন সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এপিপি) মথুর নাথ সরকার এবং আসামিপক্ষে ছিলেন আইনজীবী হুমায়ুন কবির। মামলার রায়ে বাদীপক্ষ সন্তুষ্ট হলেও আসামিপক্ষ আপত্তি জানিয়েছে। এ বিষয়ে আসামিপক্ষের হুমায়ুন কবির বলেন, আসামিরা ন্যায়বিচার পাননি। উচ্চ আদালতে এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।